গণ-অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের কাছে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে তার বিমান। হিন্দন নদীর ধারে ভারতীয় বিমানবাহিনীর এই ঘাঁটি থেকে তিনি কোথায় যাবেন, সেই বিষয়টিও এখনও অজানা। এরইমধ্যে বাতিল হয়েছে তার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা। আর তার সঙ্গীরা একে একে ছাড়ছেন ভারত। খবর ইন্ডিয়া টুডের।
ভারত সরকারের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া টুডের খবরে আজ বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সেই সঙ্গীরা একে একে ভারত ছাড়তে শুরু করেছেন। তাদের পরবর্তী গন্তব্য কোথায় এখনও তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে, বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শপথ নিচ্ছেন। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকার পতনের তিন দিন পর আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত ৯টায় বঙ্গভবনে ড. ইউনূসকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরই মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকার পতনের পর আজ ঐতিহাসিক পটভূমি রচিত হতে চলেছে বাংলাদেশে।
১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। শান্তিপূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলনকারীদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। স্বৈরাচার খেতাব পাওয়া শেখ হাসিনা সরকারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর। ১৬ আগস্ট দুপুরের দিকে রংপুর নগরীর লালবাগ থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে যেতে চেষ্টা করলে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ বাহিনী। তারা রাবার বুলেটের পাশাপাশি ছোড়ে গুলি। এতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। এরপর সারা দেশ ফুঁসে ওঠে। ৯ দফা নেমে আসে এক দফায়।
বিভিন্ন স্থানে দমন-পীড়ন যাতে না ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়। জারি করা হয় কারফিউ। এতে আরও বেগবান হয়ে ওঠে আন্দোলন। বিক্ষোভের দানা ছড়িয়ে পড়ে ঘর থেকে ঘরে। আর তাতেই পতনের পথে হাটতে থাকে সরকার। অন্যদিকে, দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষার্থী-জনতা। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগের দিন ৪ আগস্ট পুলিশের গুলিতে অসহযোগ আন্দোলনে শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
পরদিন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি পালিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়। এদিন কারফিউ কড়াকড়ি করা হয়। অন্যদিকে, স্বৈরশাসকের মসনদ গুঁড়িয়ে দিতে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কারফিউ ভেঙে প্রথমে রাজধানীর শাহবাগে, পরে গণভবনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। জনতার সমুদ্রে ভেসে যায় সব বেরিকেড। সেনাবাহিনীর সদস্যরা পথ ছেড়ে দেন। তার আগেই পালিয়ে যায় পুলিশ বাহিনী। এরইমধ্যে আসে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পালানোর খবর। সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ পরিণত হয় উল্লাসে। রাজপথসহ অলিগলিও সেজে ওঠে রঙে রঙে। রাজধানী মুখরিত হয়ে ওঠে ‘স্বৈরাচার পালিয়েছে, দেশ আজ সেজেছে’ স্লোগানে।