কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার সময় প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে দোষীদের বিচার হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমি চাই প্রত্যেকটা জিনিসের তদন্ত হোক। কারা এর পেছনে, কী কী ভাবে, কী কী ঘটনা ঘটেছে। সেই জন্য আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘকে আমি আবেদন করেছি যে তারা তাদের বিশেষজ্ঞ পাঠাক। অন্য কোনো দেশ যদি চায় তারা বিশেষজ্ঞ পাঠাক। কেননা, আমি চাই এই ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যেই দায়ী থাক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কৃষকলীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
কোটা আন্দোলনে সহিংসতার সময় পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ ঝুলিয়ে রাখার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ মেরে ঝুলিয়ে রাখা কোন ধরনের আন্দোলন।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। জুলাই মাসের প্রথমার্ধ অনেক শান্তিপূর্ণ থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে এসে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। বিশেষ করে ১৬ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনের দিন পুলিশ, বিজিবি ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। চার দিন পর ২০ জুলাই সকালে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের হামলায় পুলিশের এএসআই মোহাম্মদ মোক্তাদির নিহত হন। সেদিন হত্যার পর তার মরদেহ রায়েরবাগ ফুট ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে রাখে বিক্ষোভকারীরা।
এমন হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, মানুষ মেরে ঝুলিয়ে রাখা কোন ধরনের আন্দোলন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেখানে শিক্ষার্থীদের দাবি শতভাগ মেনে নেওয়া হয়েছে, সেখানে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কী যৌক্তিকতা আছে।’
আন্দোলনকে ঘিরে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, গাজার মতো একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। একইভাবে এদেশের সম্পদ নষ্ট হয়েছে। এর বিচার আমি জনগণের কাছে দিলাম। এ দেশের মানুষ তাদের বিচার করবে।
জঙ্গি সংগঠন হিসেবে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী ২০০৯ আইন এর ১৮ ধারা অনুযায়ী জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জামায়াত-শিবির জঙ্গিবাদী হিসেবে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে আবার ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। সে কারণে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে এদের মোকাবিলা করা ও মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা সবাই মিলে করতে হবে। কারণ, বাংলার মাটিতে জঙ্গির ঠাঁই হবে না। সেভাবে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমি দেশবাসীকে সজাগ থাকতে এবং তাদের সহযোগিতা চাই। আমি জানি বারবার আঘাত আসবে। আমি পরোয়া করি না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, একদিন নিয়েও যাবেন। কিন্তু যেখানে মানুষের জন্য কল্যাণের কাজ, সে কল্যাণের কাজ আমরা করেই যাব।
নিজের চলার পথ সহজ ছিল না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, অনেক চড়াই-উতরাই, ঘাত-প্রতিঘাত, গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। যেখানে গেছি সেখানে হামলার শিকার হয়েছি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছু বিপদগামী সদস্য বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের সেই রাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির পিতার ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নৃশংসভাবে নিহত হন।
শোকের মাসকে ঘিরে আগস্টের প্রথম প্রহর থেকে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে স্বেচ্ছায় রক্ত দান কর্মসূচি, আলোচনা সভার আয়োজন করেছে কৃষকলীগ ।