ঢাকাবৃহস্পতিবার, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট সব একেকটা রাক্ষস হয়ে উঠেছে: মির্জা আলমগীর 

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুন ৪, ২০২৪ ১০:২২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে দেখুন, ভাবতে লজ্জা হয়, বলতে লজ্জা হয়। আমাদের পুলিশ ও র‌্যাবের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদ তার বিরুদ্ধে প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় পাতায় দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে। সারা বাংলাদেশে এমন একটা জায়গা নেই যেখানে সে জায়গা কিনেনি বা দখল করেনি। এমন কি হিন্দু সম্প্রদায়ের জায়গা পর্যন্ত জোর করে দখল করে নিয়েছে। আর এই সরকার ওই চোরকে, ডাকাতকে বাঁচাবার জন্যে গোপনে তারা পাচার করে দিয়েছে।

 

মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেলে নগরীর ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম মিলনায়তনে ‘চট্টগ্রাম ফোরাম’ আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

নাগরিক সমাজের সংগঠন ‘চট্টগ্রাম ফোরাম’র উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে “জাতিসত্তার রূপকার: রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান” শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

 

এতে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ও পেশাজীবী নেতা কাদের গণি চৌধুরী।

 

বিশিষ্ট চিকিৎসক ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও ড্যাবের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. এস এম সারোয়ার আলমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ।ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম ফোরামের আহবায়ক একরামুল করিম।

 

মির্জা ফখরুল বলেন, আমার সেনাবাহিনী, যার উপর আমরা সবচাইতে বেশি ভরসা করি। যাদের ওপর মানুষের আস্থা আছে। আজ সে সেনাবাহিনীর সাবেক সেনা প্রধানের ওপর মার্কিন স্যাংশন আসে। মার্কিন স্যাংশনে বলে দেওয়া হয় কি কি কারণে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে দুর্নীতি প্রধান। তারপর সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারে বাধা দেওয়া। এরকম অসংখ্য বেনজীর ও আজিজ আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে। চতুর্দিকে দেখবেন আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট সব একেকটা রাক্ষস হয়ে উঠেছে। মাফিয়া চক্র তৈরি করেছে। পুরো দেশটাকে তারা গিলে খাচ্ছে।

 

তিনি বলেন, শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে যখন বাকশাল তৈরি করা হয়েছিল সেখান থেকে আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ছিল না। দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগের জম্ম হয়েছিল জিয়াউর রহমান যখন একদল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করে মাল্টিপার্টি সিস্টেম নিয়ে আসলেন। তখন তারা দরখাস্ত করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে নিবন্ধিত করেছিল। এটা আওয়ামী লীগ মনে করতেই চাই না।

 

তারা সারাক্ষণ বলতে থাকে জিয়াউর রহমানের কোনো কৃতিত্ব নেই। মিথ্যা অপবাদ, অপব্যাখ্যা দিতে থাকে। বলে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর ছিলেন। তিনি যুদ্ধ করেননি। এ কথা গুলো বললে অনেক কথা চলে আসবে। যেগুলো বললে তাদের পছন্দ হবে না। তাদের শরীরে আগুন ধরে যায় যখন আমরা সত্য কথা বলি।

 

তিনি বলেন, মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসি আওয়ামী লীগ চায়নি। তারা সব সময় চেয়েছে তারা নিজেরাই একাই সবসময়ই দেশ শাসন করবে, আর কেউ করবে না। তারা লুটপাট করবে, সবকিছু তারাই নিয়ে যাবে এবং করেছেও তাই। ওই পাঁচ বছর ছিল আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বছর। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বপ্নকে সেদিন ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং প্রথম সংবিধান তারা কাটাছেঁড়া করে নষ্ট করেছিল। প্রথমে তারা বিশেষ ক্ষমতা আইন করেছে, এরপর তারা জরুরি অবস্থা আইন করেছে। সবশেষে যখন সামাল দিতে পারছিল না, তখন তারা সবগুলো রাজনীতি দলকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে একদলীয় শাসন অর্থাৎ বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।

 

আওয়ামী লীগ আবারও নতুন করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই শেখ মুজিবুর রহমান তিনি গণতন্ত্রের অভিসংবাদিতা নেতা ছিলেন। তার নেতৃত্বে মাত্র ১১ দিনের পার্লামেন্টের একটি সভায় সেদিন গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল তৈরি করা হয়েছিল। এই বাকশাল ছিল বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে। এই বাকশাল তৈরি করে তারা সমস্ত জাতিকে শৃঙ্খলিত করে ফেললেন। কারো কোনো ভিন্ন মত থাকতে পারবে না। এক নেতার এক দেশ। আজকে সেই আওয়ামী লীগ আবারও নতুন করে সেই বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার জন্যে গত ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন।

 

আমরা শেখ মুজিবুর রহমানকে কখনো ছোট করি না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হওয়ার পরে সেই ব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়ে গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। এগুলো বাস্তবতা, এসব বলরে আওয়ামী লীগের গা জ্বলে যায়। তারা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে গালিগালাজ করে এবং তাকে ছোট করে তাকাতে চাই। আমরা শেখ মুজিবুর রহমানকে কখনো ছোট করি না। আমরা অন্যান্য যে জাতীয় নেতারা আছেন তাদেরকে স্মরণ করতে চায়, তাদের কথা বলি। কিন্তু আওয়ামী তা চায় না। একজন ভদ্র মানুষ (শেখ মুজিব) তাদের কাছে সব।

 

তিনি বলেন, আজকে যে শাসন আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরা সময় গণতন্ত্র বিরোধী, এরা সব সময় একনায়কত্বে বিশ্বাস করে এবং তারা ওই বাকশালই বিশ্বাস করে। তারা বাকশাল তৈরি করতে চায়, নতুন ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্রে একটা ফাসাদ দিতে চায়। সেভাবে তারা ওই শাসনকে আবার নিয়ে আসতে চায়। এজন্য ১৫ বছর ধরে সবসময় বেআইনিভাবে, বিনা ভোটে জনগণের সমর্থন ছাড়াই রাষ্ট্র যন্ত্রের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা দখল করে আছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে শর্তগুলো ছিল, সবগুলো খানখান করে দিয়ে কিছু দল ব্যক্তিকে সমস্ত সুযোগ সুবিধা দিয়ে লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছে। এদেশে তারা লুটের আর চুরির রাজত্ব তৈরি করেছে।

 

মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন ছিল একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আর এরা আমাদেরকে দিচ্ছে দুর্নীতি মাফিয়া যুক্ত, আইনের শাসনকে শেষ করে দিয়ে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে তারা আমাদেরকে ডামি নির্বাচন আর মধ্যরাতের নির্বাচন- এসব দিচ্ছে। মানুষ এসব বেশিদিন সহ্য করবে না। মানুষ প্রতিবাদ, লড়াই ও সমগ্রাম করছে আরও করবে। আপনারা চট্টগ্রামের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম করছেন, ১৫ বছর ধরে ভয়ানক দানবের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।

 

ধারণাপত্র উপস্থাপন করে কাদের গণি চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এদেশের সমৃদ্ধির প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার সততা ও দেশপ্রেম ছিল সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। তার সততা নিয়ে তার চরম শত্রুও কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে হানাদার বাহিনীর আক্রমণের সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীর হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। সেদিন রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতার কারণে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি ৭১ ও ৭৫ সালে মানুষকে এক্যবদ্ধ করেছিলেন। পাহাড়ি ও বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, আবার চট্টগ্রামের মাটিতে শাহাদাত বরণ করেছেন।

 

এস এম ফজলুল হক বলেন, জিয়াউর রহমানের শুরু চট্টগ্রাম থেকে শেষও চট্টগ্রামে। তিনি রাজনীতিকে গ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন। কৃষক শ্রমিকের মাঝে চড়িয়ে দিয়েছিলেন। আজকে ইতিহাস থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এটা কোনদিন সম্ভব হবে না।

 

মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলেই আমরা একটি মানচিত্র পেয়েছি। কিন্তু আওয়ামীলীগ সেই মানচিত্র এখন গিলে খাচ্ছে। তারা ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। তাই আমাদেরকে শপথ নিতে হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার। আজকে জিয়া পরিবারের উত্তরাধিকারী তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই সরকারের পতন না হবে আমরা কেউ ঘরে ফিরে যাবো না।

 

সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ২৫ মার্চের কালোরাত্রিতে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে জিয়াউর রহমান ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানে পাক বাহীনির বিরুদ্ধে “উই রিভোল্ট” বলে বিদ্রোহ ঘোষনা করেন। তিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। তিনি গার্মেন্টস সেক্টরের উদ্ভব ঘটিয়েছেন। বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছন। তিনি বাংলাদেশের গতি সঞ্চারিত করেছিলেন। তাই শহীদ জিয়াকে বাদ দিয়ে এদেশে কোন ইতিহাস রচিত হতে পারে না। জিয়া আছেন কোটি কোটি মানুষের অন্তরে।

 

এতে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সহ কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, সহ ধর্ম সম্পাদক দিপেন দেওয়ান, সহ উপজাতি সম্পাদক কর্নেল মনিষ দেওয়ান, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাচিং প্রু জেরী, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, সি. যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন, সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহবায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, জেলা ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. তমিজ উদ্দিন আহমেদ মানিক, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. এনামুল হক, এড. মফিজুল হক ভুঁইয়া, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড, নসরুল কদির, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনওয়াজ, এ্যাবের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিম, সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, এমদাদুল হক চৌধুরী প্রমূখ।