বিতর্ক থাকলেও বাড়তি আয়কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। আগের অভিজ্ঞতা সুখকর না হলেও অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতেই নেয়া হতে পারে এই সিদ্ধান্ত। আগে ১০ শতাংশ বাড়তি কর দিলে মিলতো সুবিধা। এবার দিতে হতে পারে ১৫ শতাংশ। সবকিছু ঠিক থাকলে আসন্ন বাজেটে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রেটির (জিএফআই) প্রতিবেদন বলছে, বছরে দেশ থেকে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। শুধু পাচারই নয়, বেড়েছে কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাও। অর্থাৎ বৈধ কিংবা অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ থেকে সরকার পায় না কাঙ্খিত রাজস্ব।
এমন অবস্থায় অর্থনীতির বাইরে থাকা অর্থের বৈধতা দিতে চায় সরকার। এর আগে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হলে ১১ হাজার ৮৩৯ জন ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করেন। এতে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, টাকা সাদা করার এটিই কি টেকসই পন্থা?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ বলেন, কালো টাকা বা অবৈধ টাকা একবার তো অবৈধভাবে নিছে, এটাকে ফেরত আনার কথা বলে তাদের বেলায় করের হার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাতে যে লোক নিয়মিত কর দিচ্ছে, তার সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখানে যদি কঠোর থাকা হতো, তাদেরকে বলা হতো, টাকা কোথায় নিয়ে গেছ, টাকা আনবা, কর দিবা, জরিমানা আছে তা দিতে হবে।
২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রায় সব খাতে বিনিয়োগে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নেয়া হয়। এমন সুযোগে সুফল মেলা কঠিন বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি সামির সাত্তার বলেন, যারা একদমই কর দেয়নি বা টাকা লুকিয়ে রেখেছে, যেটাকে আমরা কালো টাকা বলি, সেটা সাদা করার পক্ষে আমি নই। আমি কর দেবো না, টাকা লুকিয়ে রাখবো। বেশি কর দিয়ে টাকাটা হালাল করলে কেউ উৎসাহিত হবে আবার কারও ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হবে।
অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি করতে চায় সরকার। কারণ, বাজেট বাস্তবায়নে এর বিকল্প নেই। তবে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধি করার বিষয়টি বাজেট ঘোষণা না করা পর্যন্ত স্পষ্ট করতে চান না অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বাড়তি কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার এই সুযোগ কেউ নিলে অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তুলবে না সরকারের কোনো সংস্থা।