ঢাকাবুধবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বহিষ্কারের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে বিএনপিতে

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মে ৪, ২০২৪ ১২:৫১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপি। দলের নেতাকর্মীদের এ সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে দলটি। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৫ নেতাকে ‘দলীয় শৃঙ্খলা’ ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করেছে দলটি। এবার দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় আরও ৬১ নেতাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। ফলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে বহিষ্কারের তালিকা দীর্ঘ হবে।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে বৃহস্পতিবার পাঠানো কারণ দর্শানোর চিঠিতে তাদের ৪৮ ঘণ্টার সময় দিয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে কিংবা কেউ জবাব না দিলে তাদের দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে চিঠিতে জানিয়েছে দলটি।
উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের ভোটে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়া ৬১ নেতার মধ্যে ঢাকা বিভাগের ছয়জন রয়েছেন। দলের নির্দেশনার পরও তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সময়ের আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রিজভী বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ জন্য বিএনপি জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছে। এর প্রমাণও দেশবাসীসহ সারাবিশ্ব পেয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
তিনি বলেন, এ নির্দেশ অমান্য করে প্রথম ধাপের ভোটে অংশ নেওয়া দলের ৭৫ নেতাকে দল বহিষ্কার করেছে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে দলের ৬১ নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তাদের শোকজ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে তাদের বিরুদ্ধেও দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের বিপথগামী, মীরজাফর বলে আখ্যা দেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা কারণ দর্শানোর চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপির নেতা হিসেবে আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় দফায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আপনার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং দলের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। সুতরাং দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির এমন সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপের ফলে নিশ্চিতভাবেই বহিষ্কারের তালিকা দীর্ঘ হবে। যার প্রভাব পড়বে স্থানীয় রাজনীতিতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের মাঠে থাকা প্রার্থীদের বহিষ্কার করেও সবাইকে ভোটের মাঠ থেকে দূরে রাখতে পারেনি বিএনপি। এর কারণ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা জেল-জুলুম ও নানারকম হয়রানির শিকার হয়েছেন। জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতারা মনে করছেন, নিজেদের অস্তিত্ব, প্রভাব ও জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে নির্বাচনে অংশ নেওয়াই উত্তম পথ। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে নেতাদের বহিষ্কার করায় দলের তৃণমূল রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। দলের নির্দেশ অমান্যকারীদের বহিষ্কার করলেও এতে দলের কোনো ক্ষতি হবে না। দলীয় নির্দেশ সত্ত্বেও যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা সুবিধাবাদী লোক। তারা দলে না থাকাটাই শ্রেয়।
জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, দলীয় রাজনীতি করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। এখন যারা এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটা সবাই জানে। তাদের উচিত নির্বাচন বর্জন করা এবং অন্যরাও যাতে বর্জন করে সে জন্য কাজ করা। প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। দ্বিতীয় ধাপেও যারা সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সরে না দাঁড়ালে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।