চট্টগ্রামের উত্তর প্রান্তের ফটিকছড়ির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন সরওয়ার আলমগীর। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই জনপদের জনপ্রিয় মুখ ও হয়ে উঠেছেন তিনি। ব্যবসায়ী নেতা হয়েও থাকেন রাজপথে সরব এবং মুখে লেগে থাকে জাগ্রত স্লোগান। তাঁর সংসদীয় আসন ফটিকছড়ি। ব্যবসায়িক উত্থান , রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাসহ নানা বিষয়ে সিটিজি পোস্টের সাথে কথা বলেছেন তিনি ।
দেশের রাজনীতির ভবিষ্যত কিভাবে দেখছেন?
মি. আলমগীর: দেশের বর্তমান যে রাজনীতি তাহলো এক- কথায় একদলীয় শাসন। এখান থেকে অবশ্যই আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। যতদিন এই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম থাকবে ততদিন বাংলাদেশের মানুষের মত- ভাত ও ভোটের অধিকার ফিরে পাবে না। পরিস্থিতি এখন অন্ধকারের দিকে। আমরা নর্থ কোরিয়া ও হতে পারবো না, ইরান, রাশিয়া ও হতে পারবো না। দিস ইজ বাংলাদেশ এন্ড উই হেভ টু বিকেইম বাংলাদেশ। আমাদের কে আমাদের চালাতে হবে এবং আমাদের নিজেদের চালিকাশক্তি নিজেরাই হতে চাইলে আমাদের গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
কিন্তু আজ তো ছাত্র – যুব সমাজ ভোট কি তাইই জানে না। আমি রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বলবো যতদিন এই একতরফা একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়ে আছে এবং যতদিন দেশের মানুষের মত – ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের কপালে দুঃখ আছে।
ফটিকছড়ি আপনার আসন! ফটিকছড়ি নিয়ে কি ভাবছেন??
মি. আলমগীর: চট্টগ্রামের মধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা। অনেকেই জানেন না এই উপজেলার মধ্যে ১৭টি চা বাগান আছে, গ্যাস উৎপাদন এখান থেকেই হয়।এশিয়ার বৃহত্তর চা ও রাবার বাগান ফটিকছড়িতে। হিন্দুস্তানের বর্ডার দিয়ে ঘেরা ফটিকছড়ি।
ফটিকছড়ি শিল্পান্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কর্মসংস্থান তৈরির উপযুক্ত জায়গা ফটিকছড়ি। কিন্তু আফসোস ফটিকছড়িতে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এই সংকট নিয়ে কাজ করতে হবে। ফটিকছড়ির মানুষকে সচেতন করতে হবে। ফটিকছড়ির যে গ্যাস উৎপাদন তা যদি চাবাগান ও রাবার বাগানে দেওয়া হয় তাহলে কিন্তু উৎপাদন তিনগুণ বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ফটিকছড়ির যে উৎপাদন তা কিন্তু ফটিকছড়ির মানুষ পায় না। আমি চাই ফটিকছড়ির এই সম্পদগুলো ফটিকছড়িতে ব্যায় হোক এতে তিন চারগুণ উৎপাদন বাড়বে। কর্মসংস্থান আরো তৈরি হবে। বেকারত্ব দূর হবে। সামগ্রিক উন্নয়ন হবে। ফটিকছড়ির সন্তান যেহেতু আমি তো তাইই চাইবো। ফটিকছড়িতে একসময় সন্ত্রাসের জনপদ ছিল। যেখান থেকে বিএনপি যখন ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে তখন সন্ত্রাসের মুল উপরে ফেলা হয়েছিল । তারপর ২০০৮ সালের পর আবারও এই সন্ত্রাস মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। এগুলো যে এখনও বিরাজমান সেই ব্যাপারটি পেপার পত্রিকা গুলো দেখলে বুঝা যায়। আমি যেটি বলতে চাই সুস্থ রাজনীতি চর্চা , সঠিক গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে ফটিকছড়ি থেকে সন্ত্রাস নির্মূল হবে।
কথায় কথায় শোনা যায় যে ফটিকড়িতে লাশ পাওয়া গেছে , নিহত হয়েছে । এগুলোর জন্য কি আপনি কোন বিশেষ রাজনৈতিক দল কে দায়ী করছেন নাকি সর্বদলীয় কোন প্রভাব আছে ?
মি. আলমগীরঃ বিএনপি কখনো সন্ত্রাসের রাজনীতি তে বিশ্বাস করে নাই আর ফটিকছড়ির রাজনীতিতে বি এন পি কাওকে মেরেছে এটিও কেও প্রমাণ করতে পারেনি । বারবার আওয়ামী লিগের মানুষের হাতে ফটিকছড়ির মানুষ নির্যাতিত হয়েছে , বি এন পি র নেতারা নির্যাতিত হয়েছে । আওয়ামীলীগ- যুব লীগের অপরাজনীতি , তাদের গ্রুপিং , তাদের চাঁদাবাজি ফটিকছড়ির নিত্যনইমত্তিক ব্যাপার হইয়ে গেছে এখন ।
আপনি বি এন পি এর একটি দায়িত্বশীল পর্যায়ে আছেন কিন্তু বর্তমানে এ দলের নেতারা যারা আছেন , বিশেষ করে ছাত্রনেতারা যারা আছেন তারা কিন্তু খুবই কষ্টে আছেন । তারা কেও বেকার , কেও বিয়ে করতে পারছে না , কেও রাজনীতি চালাতে পারছে না । ছাত্র নেতারাই কিন্তু একটি দলের সবচেয়ে বর ভ্যানগার্ড , দল যদি সেই ভ্যান গার্ডদের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতে না পারে, এই ভ্যান গার্ড দের যদি টিকিয়ে রাখা না যায় , শক্তিশালী করা না যায় , তাহলে কি হবে ? আপনি একজন দায়িত্বশীল আঞ্চলিক নেতা হিসেবে কি ভাবেন ?
মি. আলমগীরঃ আগে বিশ্ববিদ্যালয়য়ে যখন আমরা ছাত্র রাজনীতি করেছি তখন আমদের সবার সঙ্গেই সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ছিল । তখন ছাত্র সংসদ নির্বাচন হত , ছাত্র সংসদ নির্বাচন এর কারণে গ্রহণযোগ্য ছাত্র নেতা বের হয়ে আসত । আর এখন ছাত্র সংসদ নির্বাচন তো দুরের কথা , এখন মেধাবীরাই তো ছাত্র রাজনীতি করে না । আমি আওয়ামি লিগ বিএনপি শুধু এদের কথাই বলছি না , এখন বর্তমানে কোন মেধাবি ছাত্র কি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছে ? মেধাবী ছাত্ররা কি এখন রাজনীতি করছে ? আর ধরতে গেলে তো এখন বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বিমুখ হয়ে পরেছে । এর কারণ হল বর্তমান ক্ষমতাসিনেরা ক্ষমতার মসনদ রক্ষা করার জন্য কোন ছাত্র আন্দোলন যেন গরে না ওঠে, মানুষের অধিকার নিয়ে যেন ছাত্ররা কথা বলতে না পারে, ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে না পারে , ক্যাম্পাসে যেন সুস্থ রাজনীতি করতে না পারে এসব কারণে তো ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করেই দিয়েছে । এখন হল গুলো দেখা যায় ছাত্রলীগ ক্যাডার দের নিয়ন্ত্রণে । ছাত্রলীগ না করলে তো হলে সিট ই পাওয়া যায় না এবং প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত না হলে তো তারা যে অত্যাচার নির্যাতন করে এটি তো প্রমাণিত । এই যে আবরার হত্যা তো তার প্রমাণ । এরপর আসিফ নজরুল আবু বকর কে নিয়ে যে বই লিখেছেন উনি তো সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন ।
৭১ এর ভাষা আন্দোলন- মুক্তিযুদ্ধে কারা নেতৃত্ব দিয়েছিল? এই ছাত্ররাই তো । আ স ম আব্দুর রব , নুর আলম সিদ্দিকি , আব্দুল কুদ্দুস মাখন এদের নেতৃত্বতেই তো ছাত্র আন্দোলন গরে উঠে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা তো উত্তোলন করে আ স ম আব্দুর রব। এদের কারণে , ছাত্র আন্দোলনের কারণেই তো বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । আজকে এই ছাত্র রাজনীতির কারণেই তো ৯০ এর গন অভ্যুথানের মাধ্যমে এরশাদের পতন ঘটেছিল । বর্তমান ক্ষমতা সিনেরা তাদের আখের গুছানর জন্য , লুটপাট করার জন্য ছাত্র রাজনীতিকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে । আগামী ৫ বছর যদি ক্ষমতাসীনেরা ক্ষমতায় থাকে তাহলে ছাত্র রাজনীতি বলতে কিছুই থাকবেনা , শুধু নাম কা ওয়াস্তে থেকে যাবে ।
এখন দেখা যায় বি এন পি আওয়ামী লীগ থেকে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসছে না , এই দেখা যাচ্ছে যে নেতার ছেলেরাই নেতা হচ্ছে , এটাকে বলা যায় পলিটিক্যাল নেপোটিজম। রাজপথ থেকে উঠে আসারা নেতা হচ্ছে না । গত কয়েক বছরে এই হার আরও বেড়ে গেছে । এ বিষয়ে আপনার কি মত !
মি. আলমগীরঃ আপনি যেটি বলেছেন আমি কিন্তু সেটির সঙ্গে একমত, দ্বিমত করার কোনো কারণ নেই । কিন্তু এদের সাথেও প্রতিযগিতা করে যারা উঠে আসছে তারাও কিন্তু ফেলে দেওয়ার মত না।
কিন্তু আপনার কি মনে হয় আপনার দল কি তাদের গ্রহণ করছে?
মি. আলমগীরঃ দেখুন রাজনীতি থেকে অনেকেই এখন কিন্তু বিমুখ। সারাদিন রাজনীতি করবো, যুদ্ধও করবো , রাজপথে আন্দোলনও করবো কিন্তু নেতৃত্বের প্রশ্ন আসলে নেতার ছেলে, আত্মীয় ,স্বজন হতে না পারলে অসহায়ত্ব বরন করতে হয় এবং তাদের কে দেখে অনেকেই দুরে সরে যায় । আমাদের দলের নেতা তারেক রহমান কিন্তু তৃনমূলের নেতাদের নেতৃত্বে বসাতে চান কিন্তু করে উঠতে পারছেন না । কারণ ৭।৮ হাজার মাইল দূর থেকে বিষয়টি হয়ে ওঠে না । দূরে থেকেও উনাকে অনেকের উপর ভরসা করতে হয় , কিন্তু সবাই উনাকে সত্যি কথাটা বলে না । উনার কাছে যদি সত্যি কথা গুলো যেত , তাহলে উনি যেই রাজনীতি চাচ্ছেন শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে পারায় সেই রাজনীতির প্রতিফলন ঘটত ।
চট্টগ্রাম ভৌগলিক এবং অর্থনীতিকভাবে কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। আপনি চট্টগ্রাম ও এখানের রাজনীতি নিয়ে কি চাচ্ছেন ?
মি. আলমগীরঃ আমার নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী চট্টগ্রাম নিয়ে যে কথা বলেছিল একথা বলতে গেলে তো আমার ফাঁসি হয়ে যাবে। তিনি বলেছিলেন গরু ঘাস খাই চট্টগ্রাম থেকে আর দুধ দেয় সারা বাংলাদেশে। চট্টগ্রামের যে ইনকাম তার ৫% ও যদি চট্টগ্রামের মানুষের জন্য খরচ করা হতো , তাহলে চট্টগ্রাম আর চট্টগ্রাম থাকত না, সিঙ্গাপুর হয়ে যেত। চট্টগ্রামের যত রকমের আয় আছে রাজস্ব আছে তা কিন্তু চট্টগ্রামে থাকে না , সারা বাংলাদেশে বণ্টন হয়ে যায় । সেই হিসেবে চট্টগ্রামবাসির যেভাবে থাকার কথা ছিল , কিন্তু সেভাবে নেই । বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট বলেন আর জিডিপি বলেন এটি চট্টগ্রামের সিংহভাগ । সেই হিসেবে কিন্তু চট্টগ্রামে কিছু নেই । চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে সারা বাংলাদেশে বণ্টন করলে চট্টগ্রামে কি থাকবে ? চট্টগ্রামের মানুষকে তাদের অধিকার নিয়ে আরও সচেতন হতে হবে। চট্টগ্রামের মানুষ এক প্রকার ধোঁয়াশায় আছে । তারা জানেও না যে চট্টগ্রামে এত কিছু আছে। সিঙ্গাপুর তাদের একটি পোর্ট দিয়ে পুরো পৃথিবী নেতৃত্ব দিচ্ছে ঠিক এরকমই চট্টগ্রাম হতে পারত দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর।
আপনাকে ধন্যবাদ।
মি. আলমগীরঃ আপনাদের কেও ধন্যবাদ ।