ঢাকাশুক্রবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে বোরো ধানের আবাদ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪ ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যায়। যেখানে হ্রদের উপর নির্ভরশীল চাষীরা এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে চরগুলোতে চাষাবাদ শুরু করে। এবারও শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে চাষাবাদ শুরু করেছে হ্রদের পাশে বসবাসরত চাষীরা। বর্তমানে বোরো মৌসুম চলছে তাই কাপ্তাই হ্রদের তীরবর্তী এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, বোরো ধানের চাষ শুরু করে দিয়েছে চাষীরা।

রাঙামাটি কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ৮২০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে উফশী ধানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ৩৭৩০ হেক্টর জমিতে এবং হাইব্রিড জাতের ধানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে হচ্ছে ৪৪৭৫ হেক্টর জমিতে। এদিকে, উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬৬৫ মেট্রিক টন ধান। এতে উফশী ধানের উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩৪০ মেট্রিক টন এবং হাইব্রিড জাতের ধানের উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৩২৫ মেট্রিক টন। বর্তমানে বোরো ধানের আবাদের অগ্রগতি শতকরা ৯৩ ভাগ সস্পন্ন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, রাঙামাটি সদর উপজেলায় ৫৫৮ হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান ও ২৪৩ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ধানের আবাদের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তিনি বলেন, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হেয়েছে ১৮৯০ মেট্রিক টন।

রাঙামাটির কাপ্তাই এবং বিলাইছড়ি উপজেলা সংলগ্ন হ্রদের বেশ কিছু অংশে দেখা গেছে, বোরো ধানের সবুজ আবরণে ছেয়ে গেছে কাপ্তাই হ্রদের চারপাশ। এ যেন সবুজের সাথে হ্রদ পাহাড়ের অপূর্ব মিতালি। চারদিকে বোরো ধানের চারা লাগানোর সমারোহ। সেইসাথে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার স্থানীয় চাষিরা। দীর্ঘ বছর যাবৎ কাপ্তাই হ্রদে শুষ্ক মৌসুমে জলে ভাসা জমিতে ধানের চাষাবাদ করে আসছে রহমান আলী। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, একসময় কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে যখন পানি শুকিয়ে যায় তখন মাছ ধরা কমে গিয়ে আয় কমে যেত। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। এরপর সিদ্ধান্ত নিলেন, মাছ ধরার পাশাপাশি বছরের শুষ্ক মৌসুমে যখন কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে আসবে তখন জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন।

এরকম কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমির মংবাচিং মারমা, সমিরন তঞ্চঙ্গ্যা, সুমি বেগম সহ কয়েকজন কৃষক জানান, তারা অনেকেই কাপ্তাই হ্রদে শুষ্ক মৌসুমে জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বিশেষ করে জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ করে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, হ্রদের এই জলে ভাসা জমিগুলো পলি ভরাট থাকার ফলে লাঙ্গল ছাড়াই চাষাবাদ করা সম্ভব হয়। তাছাড়া মাটি নরম থাকার ফলে পরিশ্রম যেমন কম হয় তেমনি চাষাবাদে খরচও অনেকটা সাশ্রয়ী হয়।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ জানান, কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল চাষীদের যারা জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ করে তাদের আমরা কৃষিবিভাগ থেকে সহযোগিতা করে থাকি। প্রতিবছর বোরো মৌসুমে কাপ্তাই উপজেলায় জলে ভাষা প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়ে থাকে। আশা করছি, প্রতিবছরের মতো এবারও কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে ফসলের ব্যাপক ফলন হবে।

রাঙামাটি কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতিবছরই জলে ভাসা জমিতে ভালো ফলন হয়ে থাকে। আমরা কৃষি বিভাগের সকলেই জলে ভাসা জমিতে চাষ করা এসকল কৃষকদের বিভিন্নভাবে দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।