স্মার্ট ওয়ার্ড’–এ রূপান্তরের প্রথম ধাপ হিসেবে নগরের পৃথক তিনটি ওয়ার্ডে থাকা ওভারহেড ক্যাবল বা ঝুলন্তভাবে থাকা ব্রডব্যন্ড ইন্টারনেট, কেবল টিভি নেটওয়ার্কের তার (ডিশ সংযোগ) ও জেনারেটর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তার অপসারণ করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এতে অবশ্য অপসারণকৃত ঝুলন্ত তারের মাধ্যমে দেয়া সেবায় বিঘ্ন ঘটবে না। কারণ ওয়ার্ডে বিদ্যম্যান ড্রেনেজ সিস্টেমের পাশ দিয়ে আলাদা ‘ক্যাবল ট্রে’ তৈরি করা হবে। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকল্প এই লাইন ব্যবহার করে তাদের তারগুলো নিয়ে যাবে। কোথাও এই ট্রে থাকবে আন্ডারগ্রাউন্ডে। অর্থাৎ মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, স্মার্ট ওয়ার্ডে রূপান্তরের তালিকায় থাকা ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ১৪ নং লালখান বাজার, ১৫ নং বাগমনিরাম এবং ২১ নং জামালখান। এর মধ্যে লালখান বাজার ওয়ার্ডে প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ করে বিকল্প লাইন বা ক্যাবল ট্রে তৈরি করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এ তিনটি ওয়ার্ডে ঝুলন্ত তার অপসারণ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা আছে চসিকের। এতে চসিককে কারিগরি সহযোগিতা করবে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এবং ক্যাবল অপারেটর অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। এই দুই প্রতিষ্ঠান এবং চসিকের সমন্বয়ে একটি পরিচালন ও ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পুরো শহরে তারের জঞ্জাল। এতে সৌন্দর্যহানি ঘটছে। তাই পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি ওয়ার্ডকে তারের জঞ্জালমুক্ত করতে বেছে নিয়েছি। সবগুলো তার স্যুয়ারেজের পাশ দিয়ে নিয়ে যাব। যেখানে রাস্তা পার করাতে হবে সেখানে মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাব। এই তিন ওয়ার্ডের ভালোমন্দের উপর নির্ভর করে বাকি ওয়ার্ডগুলোতে বাস্তবায়ন করব।
মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ ক্যাবল ব্যবস্থাপনা হলে বৈদ্যুতিক পিলারের দুর্ঘটনা কমবে ও নগরের সৌন্দর্য বাড়বে। তাছাড়া তার কাটা ও চুরি রোধ হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবে। এ উদ্যোগের কারণ হিসেবে মেয়র বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারের পৌঁছাতে হলে চট্টগ্রাম শহরের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। নান্দনিক এবং পরিবেশবান্ধব নগর হিসাবে চট্টগ্রামকে গড়ে তুলতে হলে শহরের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবামান বৃদ্ধি করতে হবে। ডিস ও ইন্টারনেট সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের মাধ্যমে সুশৃঙ্খলভাবে উন্নত ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জন অনেকটা সহজ হবে।
চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ বলেন, আইএসপিএবি ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্পভুক্ত তিনটি ওয়ার্ডে জরিপ চালিয়ে কী পরিমাণ ঘর আছে তার তালিকা করবে। একইসময়ের মধ্যে তারা বিটিআরসি থেকে অনুমোদন নিয়ে আসবে। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা কাজ শুরু করবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সরকারের উদ্যোগের আওতায় চট্টগ্রামকে প্রথম স্মার্ট জেলা করতে গত বছর কাজ শুরু করে করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে চসিকের সঙ্গে গত কয়েক মাসে একাধিক বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। যেখানে লালখান বাজার, জামালখান ও বাগমনিরামকে স্মার্ট ওয়ার্ডে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। স্মার্ট ওয়ার্ড নিয়ে লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর একটি প্রোফাইলও তৈরি করে। এতে ঝুলন্ত তার অপসারণের বিষয়টিও অর্ন্তভুক্ত। যার সঙ্গে বাকি দুই ওয়ার্ড সমন্বয় করে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।
লালখানবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল বলেন, পুরো বিষয়টিকে আমরা ফাইবার টু দ্যা হোম বলছি। এই নেটওয়ার্ক আমার ডেভেলাপ করেছি। নিজস্ব জনবল দিয়ে বিকল্প লাইন হয়ে গেছে লালখান বাজারে। এখন সার্ভিস প্রোভাইডাররা কানেকশন দিলেই হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ড্রেনেজ সিস্টেমের পাশ দিয়ে ক্লিপিং করে ফাইবার পাইপ নিয়ে গেছি। যেখানে ড্রেন নেই সেখানে রাস্তা কেটে আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে পরবর্তীতে এলাকার নিরাাপত্তা বাড়াতে সিসিটিভি সম্পৃক্ত করা হবে।
নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন স্থায়ী কমিটির সভাপতি শৈবাল দাশ সুমন বলেন, বৈদ্যুতিক পোলে ডিস ও ইন্টারনেট ক্যাবলের জঞ্জাল অপসারণের মাধ্যমে নান্দনিক শহর গড়ার পথে অগ্রসর হচ্ছি আমরা।
জানা গেছে, আইএসপিএবি এবং কোয়াব এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেছে চসিক। সর্বশেষ গতকালও একটি বৈঠক হয়। এতে বক্তব্য রাখেন মেয়র। এর আগে ২১ ডিসেম্বরও একটি সভা হয়।