পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ থাকার পরও চট্টগ্রামে চালের বাজার অস্থির করে তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।
বাজার তদারকি টিম ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বলেছেন, ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। চালের পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। তবু একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। মূলত সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থির করে তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। দামের এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে পাইকারি বাজারে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রাম নগরীতে চালের পাইকারি বাজার আছে দুটি। এর মধ্যে একটি চাক্তাই আরেকটি পাহাড়তলী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনের আগের দিন অর্থাৎ গত ৬ জানুয়ারি পাইকারি বাজারে সেদ্ধ চালের বস্তা জিরাশাইল ছিল ৩১৫০ টাকা, পাইজাম ২৫০০ টাকা, নূরজাহান ২৩০০ টাকা, মিনিকেট ২৩৫০ টাকা, ভিয়েতনামের বেতি ২২৫০ টাকা ও দেশি বেতি ২৪০০ টাকা।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) পাহাড়তলী পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বস্তা জিরাশাইল ৩৩০০ টাকা, পাইজাম ২৬৫০ টাকা, নূরজাহান ২৫০০ টাকা, মিনিকেট ২৭০০ টাকা, ভিয়েতনামের বেতি ২৫০০ টাকা ও দেশি বেতি ২৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে সেদ্ধ চালের মতো আতপ চালের মধ্যে কাটারি প্রতি বস্তায় ৪০০ টাকা বেড়ে ৩৬০০ টাকা, মিনিকেট ৩০০ টাকা বেড়ে তিন হাজার টাকা, নাজিরশাইল ২০০ টাকা বেড়ে ৩৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনিগুড়া চালের দামও বস্তায় ১০০০ টাকা বেড়ে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সোমবার দুপুর ২টা থেকে বিকাল পর্যন্ত নগরীর পাহাড়তলী বাজারে চালের আড়তে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। অভিযানে লাইসেন্স প্রদর্শন করতে না পারায় একটি চালের আড়তের মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি একাধিক আড়তদারকে মজুতের ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
পাহাড়তলী বাজার ঘুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিম জানায়, প্রতি বস্তা চাল পাইকারিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। আতপ চালের বস্তায় ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, চালের বাজার অস্থির করার ক্ষেত্রে চালকল মালিক (মিলার) ও আড়তদাররা বেশি দায়ী। মিলার ও আড়তদাররা বাজারে ধীরে ধীরে চাল ছাড়ছেন। চাহিদার চেয়ে জোগান কম হওয়ায় কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। এ কারণে বাড়ছে চালের দাম।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা আজকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যবসায়ী ছাড়াও অনেকে ট্রেড লাইসেন্স বা লাইসেন্স ছাড়া ধান-চাল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। এসব ধান-চাল মজুতকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
পাহাড়তলী বাজার বণিক সমিতির সহসভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল মজুত আছে। এছাড়া প্রতিটি চালকলেও মজুত অনেক। ফলে দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই।’
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘মিলার ও আড়তদাররা যাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে, সে ব্যাপারে নজর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চাল উৎপাদনশীল অঞ্চলগুলোতে মজুত এবং অনেক প্রতিষ্ঠানের বেনামে চাল মজুতের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে কৃত্রিম সংকট মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে।’