ঢাকারবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আতংকের ভয় ভেঙে টানা ৫০ দিন পর নয়া পল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীরা

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
ডিসেম্বর ১৬, ২০২৩ ৩:৪৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নানান শঙ্কা ও গ্রেফতার আতংকের ভয় ভেঙে টানা ৫০ দিন পর নয়া পল্টন এলাকায় উপস্থিত হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় র‍্যালি বের করতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হচ্ছেন তারা।

শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে মগবাজার পর্যন্ত বিজয় র‍্যালি বের করার কথা ছিল। তবে সময় গড়ালেও র‍্যালি বের হয়নি এখনও। এদিকে সকাল ১২টার আগ পর্যন্ত কার্যালয়ের আশপাশে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা না গেলেও ১২টার পর হঠাৎ করে তাদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংখ্যাও বাড়ছে। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত তারা খণ্ড খণ্ড হয়ে অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় তারা দলীয় স্লোগানসহ সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।

দুপুর সাড়ে ১২টায় সরজমিন নয়া পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিএনপি ও দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে মিছিল নিয়ে কার্যালয়ের সামনে দিয়ে বারবার শোডাউন করছেন। র‍্যালি উপলক্ষে পিকআপ ভ্যানে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী মঞ্চ। সেই মঞ্চ থেকে কে কোন স্থানে অবস্থান নেবেন সেই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এ সময় সকলকে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের নয়া পল্টন এলাকার বাহিরে না যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বারবার। মিছিলের অগ্রভাগে থাকবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। এর পর ধাপে ধাপে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের অবস্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও বিএনপির কার্যালয় তালাবদ্ধ। এই তালা খোলার কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

উপস্থিত নেতাকর্মীরা বলছেন, কখনোই ভয় ছিল না। তবে পুলিশের গ্রেফতার এড়িয়ে রাজপথে থাকাটাই আমাদের লক্ষ্য। পুলিশ ছাড়া এই সরকার দুই দিনও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আজ আমরা বিজয় উদযাপন করতে এখানে একত্রিত হয়েছি। পাশাপাশি সরকারকে জানান দিতে চাই এত নির্যাতন- গ্রেফতারের পরেও বিএনপি কর্মীর সংকট হয়নি। সাধারণ মানুষও আজ বিএনপির সঙ্গে একাগ্রতা প্রকাশ করছে।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, বিএনপির নেতারা ঐক্যবদ্ধ আছে, তারা রাজপথেই আছে। সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন আমাদের দলের কর্মীদের মনোবল ভাঙতে পারেনি। তারা তাদের লক্ষ্যে অটুট। কারণ বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মী স্বাধীনতাকামী। সরকার পতনের আন্দোলনে সময়, অবস্থান ও পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের যখন যা করা দরকার তাই করবো।’

আজকের র‍্যালি সরকার পতনের আন্দোলনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে বলে মনে করেন বিএনপির সঙ্গে থাকা অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা।

বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে যুগপতে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক সংগঠনের এক নেতা বলেন, গত ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হওয়া বার্তা দিয়েছিল কোনও কিছুতেই বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে না। সেদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ লক্ষ্য করছিলাম আমরা। তার পর কোনও কঠিন কর্মসূচিতে না গেলেও ধারাবাহিকভাবে করে আসা অবরোধ কর্মসূচিতে আন্দোলন সচল রাখছিলাম। এর মাঝে বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবসেও বিএনপির পরিকল্পনা ছিল নেতাকর্মীদের একত্রিত করার, তাদের মনোবল দেখার। তবে শুধু বিএনপিই নয়, সারা দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ।

হাতে সময় কম জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের গণবিরোধী যে সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক দলগুলোর সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করার, তার তোয়াক্কা না করে কঠিন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর সময় দেওয়া যাবে না। এই বিজয়ের মাসেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

এদিকে বিএনপির র‍্যালিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। পুলিশের অবস্থান সম্পর্কে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার গোলাম রুহানী বলেন, পুলিশের পক্ষ হতে বিএনপিকে বিজয় র‍্যালি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও অফিসিয়ালি কিছু বলা হয়নি। তবে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় দিবসের র‍্যালি করতে পারবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই বাড়তি পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি তাদের কর্মসূচি পালন করবে। আমরা আমাদের মতো পরিস্থিতি কন্ট্রোলে রাখবো। তারা যদি কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা সংঘাত না করে তাহলে কর্মসূচি পালনে কোনও বাধা নেই।

উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর দলীয় মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হলে বিকাল থেকেই দলটির কার্যালয় নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তালা। পর দিন ২৯ অক্টোবর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট বিএনপি কার্যালয়ের তিন দিকে ‘ডু নট ক্রস– ক্রাইম সিন’ লেখা হলুদ ফিতা টানিয়ে দিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। এরপর থেকে গত ৫০ দিন ধরে সেখানে সর্বক্ষণ অবস্থানে আছে পুলিশ।