আর মাত্র কয়েকদিন পরই হাট ভাঙছে বিশ্বকাপের। গ্রুপ পর্বের ম্যাচ শেষে আজ (বুধবার) থেকে শুরু হবে সেমিফাইনাল। প্রথম সেমিফাইনালে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হবে চতুর্থ দল নিউজিল্যান্ড। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায়। যা সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও টি-স্পোর্টস।
চলমান বিশ্বকাপে শিরোপার দাবিদার কারা? এমন প্রশ্নে নিশ্চিতভাবেই আসবে স্বাগতিক ভারতের নাম। দারুণ ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে এখন পর্যন্ত অপরাজিত রোহিত শর্মার দল। ৯ ম্যাচের একটিতে কিছুটা কোণঠাসা হলেও বাকি ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে। গ্রুপের পর্বে ধারাবাহিকতায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচটিও খুব বেশি কঠিন হওয়ার কথা নয় স্বাগতিকদের জন্য।
যদিও সেমিফাইনালের লড়াইয়ের আগে পুরোনো পরিসংখ্যান কথা বলছে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে। আইসিসির ইভেন্টে ভারতের বিপক্ষে অতীত পরিসংখ্যানে এগিয়ে কিউইরা। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মিলিয়ে ১৩ ম্যাচ খেলে ভারতের জয় মাত্র চারটিতে। বাকি ৯ ম্যাচই জিতেছে নিউজিল্যান্ড। আরও একটি পরিসংখ্যান আত্মবিশ্বাস দিতে পারে কিউইদের। আইসিসির সীমিত ওভারের কোনও ইভেন্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। দুইবারের মুখোমুখি লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছে কিউইরাই। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের স্মৃতিতো এখনো তরতাজাই। সেবার বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ১৮ রানে হেরে ভারতের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন চূর্ণ হয়েছিল। তারপর চার বছর কেটে গেছে। ভারতীয় শিবিরে অনেক কিছু বদলে গেছে। রোহিত শর্মার নেতৃত্বে এবারের বিশ্বকাপে ভারত অপ্রতিরোধ্য। তারপরও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ভারতের ওপরই বাড়তি চাপ থাকবে-এটাই স্বাভাবিক। তার মধ্যে স্বাগতিক দলের দর্শকদের চাপতো আছেই।
অতীত পরিসংখ্যান নিয়ে অবশ্য ভাবছে না তারা। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘অতীতে যা ঘটেছে, সেটা আপনার মনের মধ্যে থাকতে পারে। আমি মনে করি না ১০ বা ৫ বছর আগে কিংবা শেষ বিশ্বকাপে কী ঘটেছিল সেটা নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা হয়েছে।’
এদিকে নিউজিল্যান্ডের পেসার লকি ফার্গুসন মনে করেন, সেমিফাইনালে ভারতকে হারানো সম্ভব, ‘আমরা কয়েকটা ম্যাচ বেশ কাছে গিয়ে হেরেছি, বড় ব্যবধানে হেরেছি তা কিন্তু নয়। পাকিস্তানের কাছে হেরে গিয়েছিলাম ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মে। তাই বলে আমাদের মনোবল কমেনি। কারণ, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। একই খেলা সেমিফাইনালে খেলতে চাই। ভারত কঠিন প্রতিপক্ষ। তবে তাদের হারানো অসম্ভব নয়।’
ওয়াংখেড়ের পিচে বোলারদের জন্য খুব বেশি সুবিধা নেই। স্বাভাবিক ভাবেই এখানে ব্যাটারদের রাজত্ব থাকবে। ৫০ ওভারের ম্যাচে এই পিচে বল করা বড় চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে সেমিফাইনাল ম্যাচে উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে চাইবেন না রোহিত শর্মারা। এই পিচে যেহেতু বাউন্স বেশি, তাই এখানে বাড়তি স্পিনার খেলানোর প্রশ্নই উঠে না। তাই রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে খেলানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। হার্দিক পান্ডিয়া চোটের কবলে পড়ায় দলে ছয় নম্বর বোলার নিয়ে একটু সমস্যা তো আছেই। জসপ্রীত বুমরা, মোহাম্মদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজা— এই ৫ জনের মধ্যে কেউ ব্যর্থ হলে চাপে পড়তে পারে ভারত। সেক্ষেত্রে বিরাট কোহলি, শুবমান গিল বা সূর্যকুমার যাদবকে দিয়ে দুই এক ওভার করাতে পারেন রোহিত শর্মা।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড শিবিরে বেশকিছু পরিবর্তন হতে পারে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দেখা গেছে, নিউজিল্যান্ড ইশ সৌদির পরিবর্তে লকি ফার্গুসনকে খেলিয়েছিল। সেই ম্যাচে লকি ১০ ওভার বল করে মাত্র ৩৫ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন। তাই সেমিফাইনালে তার ওপরই ভরসা রাখতে পারেন কিউই কোচ গ্যারি স্টিড। এছাড়াও ফাইনালে আরও একটি বড় পরিবর্তন ঘটতে পারে। বিশ্বকাপে তেমন ফর্মে নেই টিম সাউদি। ওয়াংখেড়েতে তার পরিবর্তে কাইল জেমিসনকে দেখা যাওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে।
ঘরের মাটিতে সর্বশেষ ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ভারত বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলেছিল। তৃতীয় শিরোপার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার পর আবারও তাদের সামনে সুযোগ শিরোপা জেতার। তার আগে চার বছর আগের সেমিফাইনালে কিউইদের বিপক্ষে হারের বদলা নেওয়ার সুযোগ ভারতের সামনে। নিউজিল্যান্ডের সুযোগ ভাগ্য বদলানোর। আগের বার ফাইনালে খেলেও ইংলিশদের কাছে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হতে হয়েছে। আজ ভারতকে হারাতে পারলে আরও একবার অন্তত শিরোপা জয়ের কাছে যাওয়া যাবে। এখন শুধু অপেক্ষা।