সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার আগে লাখো নেতাকর্মীর জমায়েত ঘটে। দুপুরে এই মহাসমাবেশ শুরুর পর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য শেষ করার আগেই পুলিশের টিয়ারগ্যাস, গুলি, লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপসহ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হলে পণ্ড হয়ে যায়। বেলা আড়াইটার দিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, সে সময় পুলিশের একটি দল সাঁজোয়া যানসহ এগিয়ে আসতে থাকে নয়াপল্টনের দিকে। সেখানে ছররা গুলি-টিয়ার শেল ছোড়া হয়। আমীর খসরুর বক্তব্যের পর পরই সভামঞ্চের মাইক বন্ধ হয়ে যায় এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতারা বসে পড়েন। ১০ মিনিটের ব্যবধানে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের তোপের মুখে পুরো এলাকার নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নেমে যান মঞ্চ থেকে। এ সময় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি হ্যান্ডমাইকে রবিবার (আজ) সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা-গুলিবর্ষণ এবং অসংখ্য নেতাকর্মী আহত করার প্রতিবাদে রবিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা দেশব্যাপী হরতাল পালন করা হবে। তিনি পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের হামলার নিন্দা জানান এবং আজকের হরতাল সফল করার আহ্বান জানান।
এদিকে বিএনপি হরতালের ঘোষণা দেওয়ার পর বিএনপির সঙ্গে যুগপত আন্দোলনের সঙ্গী দল ও জোটসমূহ পৃথকভাবে আজ সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাস্তায় রাস্তায় লাঠি নিয়ে বেড়াচ্ছে তারা (আওয়ামী লীগ)। পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালিয়েছে। এদিকে সন্ধ্যার পর জামায়াতে ইসলামী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আজ রবিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম বিবৃতিতে বলেন, রাজধানী ঢাকার শাপলা চত্বরে জামায়াত ঘোষিত মহাসমাবেশ বানচাল করার হীন উদ্দেশ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। আমি সরকারের এই অন্যায় গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিএনপির মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলা, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং জামায়াত ঘোষিত মহাসমাবেশে পুলিশের বাধাদান ও মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ রবিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
এদিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গতকাল সকাল থেকেই সারা দেশ থেকে আগত নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন নয়াপল্টনে। রাত থেকেও বহু নেতাকর্মীরা সেখানে ছিলেন। বেলা ১১টার পর জাসাসের কর্মীরা সংগীত পরিবেশন করেন। পরে নির্ধারিত সময়ের আগেই দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। তার আগেই নয়াপল্টনকে কেন্দ্র করে সন্নিহিত বিশাল এলাকা লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এ সময় কাকরাইলের প্রান্তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস মেরে নিরস্ত করে। এরপর সংঘর্ষ নয়াপল্টনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। বেলা ২টার দিকে মহাসমাবেশস্থলের মঞ্চ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কারো উসকানিতে পা দেবেন না, দয়া করে বসে যান। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নস্যাত্ করতে চায় তারা (সরকার)। মির্জা ফখরুল যখন এ আহ্বান জানাচ্ছিলেন, তখন কাকরাইলের দিক থেকে কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া আসছিল। তবে মহাসমাবেশের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। এ সময় মঞ্চ থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দুয়েকটা পটকায় ভয় পাবেন না। গুলি হলে হবে। এরপর বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমান বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তার বক্তব্যের শেষ দিকে এসে মাইক বন্ধ হয়ে যায়। তখন বেলা আড়াইটা।