ঢাকাবৃহস্পতিবার, ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কি হতে যাচ্ছে “২৮” অক্টোবর?

মুহাম্মদ ইশাত মান্নান | সিটিজি পোস্ট
অক্টোবর ২৭, ২০২৩ ১০:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ইতিহাসের পাতা যদি অক্টোবরের ২৮ তারিখ দিনটিতে থামে তাহলে আগামীকাল হলো লগি বৈঠা আন্দোলন বা লগি বৈঠা র‍্যালির ১৭ বছর।

২০০৬ সালের এই দিনে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ গিয়েছিল অনেকের। সেই সময় বিএনপির ক্ষমতা ছাড়ার দিনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি এবং জামায়াতের সহিংসতা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল পল্টন, বায়তুল মোকাররম এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকা। আজও সেই সহিংসতা দগদগে স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ। লগি বৈঠা ছিলো ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আহ্বায়িত একটি রাজনৈতিক সমাবেশ, যা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গৃহীত কিছু অভিযুক্ত সিদ্ধান্তের কারণে সঙ্ঘটিত হয়। এটি ছিলো ২০০৬-০৮ সময়কালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের একটি অংশ।

 

১৭ বছর পর আবারও আগামীকাল ২৮ অক্টোবর। আগামীকাল আবার রাজনীতিতে টানটান উত্তেজনা ফিরে এসেছে। বিএনপি ঢাকার নয়াপল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ ডেকেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে মহাসমাবেশ করবে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথমে কোনো রাজনৈতিক দলকেই রাস্তায় সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি। তবে পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসন কিছুটা নমনীয় হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরেও শাপলা চত্বরে সমাবেশ ডেকেছে জামায়াত। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। তারা বলেছে, কোনো অবস্থাতেই জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। কারণ জামায়াত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নই। অন্যদিকে জামায়াত বলেছে, যেকোনো মূল্যে তারা শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবে।

 

 

আগামীকালকে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। আগামীকাল দেশে কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে নানা রকম উৎকণ্ঠা, অস্বস্তি এবং আলোচনা চলছে। তবে বিএনপি বলছে কালকে শুধু মাত্র একটি সমাবেশ হবে এবং এই সমাবেশ থেকে সরকারকে চূড়ান্ত আল্টিমেটাম দেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে যদি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মেনে নেয় তাহলে তারা সর্বাত্মক আন্দোলনে যাবে। এরকম বক্তব্য অবশ্য বিএনপি এখন প্রতিনিয়তই দিচ্ছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফোরামে এই বক্তব্য বিএনপি দিচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপি যে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে, নাশকতা করছে তা প্রতিহত করার জন্যই আওয়ামী লীগ সজাগ থাকবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে দলের সাধারণ সম্পাদক অতন্ত্র প্রহরীর মতো জেগে থাকতে বলেছেন। আর অন্যদিকে জামায়াতের পরিকল্পনা ভিন্ন। তারা একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়, তাদের কথাবার্তা এবং পরিকল্পনা থেকে সেটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল কালকে কি রাজনৈতিক সহিংসতা বড় আকারে দেখা দেবে? নাকি রাজনীতির অশনি যাত্রার সূচনা হবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে আগামীকাল পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।

 

তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি বুদ্ধিদীপ্ততার পরিচয় দেয়, তাহলে তারা সহিংসতা এড়িয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে নিয়ে যত না উদ্বিগ্ন তার চেয়ে বেশি আতঙ্কিত জামায়াতের সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়ে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং জামায়াতের সমাবেশের মধ্য দিয়ে যারা রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থান চায়, যারা বাংলাদেশে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা আনতে চায় তারা সুযোগ খুঁজবে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করবে। আর এই কারণেই কালকে ঢাকার তিনটি জনসভায় শান্তিপূর্ণ হওয়া না হওয়ার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।

 

 

বিএনপির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তারা মনে করছেন যে যদি সহিংসতা সৃষ্টি হয় তাহলে তাদেরই ক্ষতি হবে। বিএনপির নেতারা তখন নতুন করে আন্দোলন শুরু করার জন্য আর সুযোগ পাবেন না। অন্যদিকে এই সহিংসতায় আওয়ামী লীগেরও ক্ষতি হবে। কারণ আওয়ামী লীগের ভাষ্য মতে তারা চাইছে যে একটি সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখা, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সংবিধানের আওতায় সম্পন্ন করা সেটি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আর এ কারণেই সকলের আশঙ্কা এবং উৎকণ্ঠা। আওয়ামী লীগ-বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কোনো অশুভ শক্তির কালো ছায়া নেমে আসবে কি না? এবং রাজনীতিতে একটি সহিংসতার সূচনা হবে কিনা তা নিয়ে আছে নানামুখী আলাপ আলোচনা, জল্পনা কল্পনা। তবে গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে রাজনৈতিকদলগুলো যদি সহনশীলতার পরিচয় দেয়, শুধুমাত্র সমাবেশের মাধ্যমেই তাদের কর্মসূচি সীমিত রাখে তাহলে হয়তো দেশ একটি অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা পাবে।