গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের যখন যারাই ক্ষমতায় এসেছেন, তারাই মনে করেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গণতন্ত্র একমাত্র তারাই জনগণকে উপহার দিচ্ছেন। (একটা বড় হাসির ইমোজি হবে)
তারা আবার বিরোধী দলে গেলে সেই একই তারাই ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ধ্বংসের অভিযোগ আনেন। গণতন্ত্র আসলো কোথায় ধ্বংস ও হলো কোথায়?
দেশ এখন ফিফটি প্লাস। অর্থনীতি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা অনেক উন্নতি করেছি। আমাদের প্রবৃদ্ধি, গড় আয়ু, শিক্ষার হার ইত্যাদি বেড়েছে, স্বল্পোন্নত দেশের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে মধ্য আয়ের দেশের স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু আমাদের রাজনীতি তথা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটি রয়ে গেছে একেবারে নড়বড়ে।
গণতন্ত্রের জন্য আমরা দশকের পর দশক আন্দোলন করছি, অথচ একটি সর্বসম্মত নির্বাচনপদ্ধতি বা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি; যে ব্যবস্থায় জনগণ পছন্দমতো প্রতিনিধি বা নেতৃত্ব বাছাই করার সুযোগ পাবে।
গণতন্ত্রের জন্যই আমরা পাকিস্তানকে ত্যাগ করেছি। গণতন্ত্রের জন্যই আমরা সামরিক স্বৈরশাসককে হটিয়েছি; কিন্তু গণতন্ত্র কতটা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি, সে ব্যাপারে জনমনে যথেষ্ট সংশয় আছে। এই ব্যর্থতার দায় যারা আজ ক্ষমতায় আছেন এবং অতীতে যারা ছিলেন, কেউ এড়াতে পারেন না।
তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে পারিবারিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক এমনকি বৈবাহিক সম্পর্কও করতে পারেন; কিন্তু রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে বসতে পারেন না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কোনো দল নির্বাচনে হারতে পারে, সেটি তারা মানতে চান না। সবাই নিজেকে বিজয়ীর আসনে দেখতে চান। এ কারণেই পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন নিয়ে এত আন্দোলন, এত বক্তৃতা, এত ফর্মুলা, এত কৌশলের খেলা।
গণতন্ত্রের প্রধান পূর্বশর্ত একসঙ্গে চলা, সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া। আলোচনা, বিতর্ক, মতবিনিময় যে গণতন্ত্রের অপরিহার্য দিক, সেটি আমাদের রাজনীতিকেরা স্বীকার করতে চান না।
ক্ষমতাসীনরা ইচ্ছামতো সভা-সমাবেশ করেন, দলের প্রচারে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি গণমাধ্যম ব্যবহার করেন; কিন্তু অন্যকে সেই অধিকার ও সুযোগ দিতে নারাজ।
বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ করার অধিকারের কথা বললে আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপির হরতাল–অবরোধের নামে ধ্বংসযজ্ঞের উদাহরণ দেন।
কিন্তু বিএনপি যখন ঘোষণা দিয়ে সেই পথ পরিহার করার কথা বলছে, তখন কেন তাদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হবে?
শক্তিশালী বিরোধী দলই সরকারের বন্ধু হতে পারে, অনুগত বা গৃহপালিত বিরোধী দল নয়। নাগরিক সমাজ কিংবা গণমাধ্যমের সমালোচনা ক্ষমতাসীনদের সঠিক পথে চলতে সাহায্য করে, স্তুতি নয়। কিন্তু এই সরল সত্যটি কোনো সরকারই বুঝতে চায় না।
সরকার কোনো বিষয়েই ভিন্নমত ও ভিন্নচিন্তাকে সহ্য করছে না। তারা এটাই ভুলে যায় গনতন্ত্র= ভিন্নমত