আমেরিকার ভিসা নীতির পরে বিএনপি নেতৃত্ব ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলেন, একাত্তরের রাজাকার-শাবকদের কথায় এদেশের ক্ষমতা পরিবর্তন হবে না। বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে নেতারা বলেন, আমরা একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির কারণে আমাদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
নির্বাচন বানচালের যত ষড়যন্ত্রই করা হোক জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনী বৈতরণী আমরা পার হবো।
গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতারা এসব কথা বলেন। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, আজকে একটাই কথা- দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে আমরা শান্তির পথে নিয়ে যেতে চাই।
দেশের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বারবার দরকার শেখ হাসিনার সরকার। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করে এই স্লোগানকে সার্থক করবো। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ আর দুর্ভিক্ষের দেশ নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বোচ্চ পরিমাণ খাদ্য মজুত আছে। বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছে। এটি সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ নন্দিত, প্রশংসিত। আমাদের সকল উন্নয়ন দৃশ্যমান। তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে।
বিএনপি ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে আন্দোলন শুরু করেছে। নির্বাচন নাকি সঠিক হয় নাই, সুষ্ঠু হয় নাই। ২০০৮ সালের নির্বাচন সারাবিশ্ব প্রশংসা করেছে। বিএনপি ২০১৩ ও ২০১৪ সালে আন্দোলনের নামে আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২০০৪ সালে গ্রেনেট হামলা করেছে। তখন বিশ্ব বিবেক কোথায় ছিলেন? সেই বিশ্ব বিবেককে বলতে চাই- কোনো পক্ষপাত করবেন না। আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। বৈরিতা চাই না। নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির কারণে আমাদের সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে। বিরোধীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। নির্বাচন হলো একমাত্র জনসমর্থনের ভিত্তি। এই জনসমর্থন নিয়ে এই গণমানুষের দল ক্ষমতায় আছে। তাই রক্তচক্ষু আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে লাভ নেই। নির্বাচন বানচালের যত ষড়যন্ত্রই করেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনী বৈতরণী আমরা পার হবো। আওয়ামী লীগের এই সভাপতিম-লীর সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ করেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। আওয়ামী লীগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিকে মোকাবিলা করেই এই মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছে। সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি নেতারা বলছে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে। ক্ষমতা কি মামার হাতের মোয়া? যে চাইলেই ছেড়ে দিলাম? তোমরা কারা? তোমাদেরকে এদেশের জনগণ চেনে। একাত্তরের রাজাকার-শাবকদের কথায় এদেশের ক্ষমতা পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমেরিকার ভিসা নীতির পরে গতকাল দেখলাম বিএনপি নেতৃত্ব ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। তোমাদেরকে এদেশের লোকজন চেনে।
এর আগে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়। এতে দুপুর থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে ব্যানার- ফেস্টুন হাতে আসেন নেতাকর্মীরা। সেগুলো বারবার নামাতে বলা হলেও অনেকেই নামাননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বলা হয়, ব্যানার না নামালে পদ থাকবে না। সমাবেশ শুরুর পর উপস্থিত নেতাকর্মীদের ব্যানার নামিয়ে ফেলতে বলা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বারবার আহ্বান জানানোর পরও অনেককে ব্যানার ধরে রাখতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সবাইকে ব্যানার- ফেস্টুন নামাতে বলেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, যারা এখনো ব্যানার ধরে আছেন, যুবলীগের নেতাকর্মীরা সেগুলো নামিয়ে দেন। এরপরও ব্যানার না নামালে ক্ষুব্ধ হয়ে মির্জা আজম বলেন, ব্যানার না নামালে কিন্তু পদ থাকবে না। আমরা ছবি তুলে রাখবো, যারা ব্যানার নামাননি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যানার নিয়ে আসা কারও নাম বলা হবে না। সবাইকে নিজ দায়িত্বে ব্যানার নামাতে হবে।
সবশেষ যৌথসভায় দেয়া নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর্মী নিয়ে সমাবেশে আসতে বলেছিলাম, টাকা দিয়ে কামলা নিয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছিল। এরা কারা, যারা এত বলার পরও ব্যানার নামাচ্ছে না? পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক মঞ্চ থেকে বলেন, এখনো ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অনেকগুলো ব্যানার দেখা যাচ্ছে। যারা নির্দেশ মানেননি, তাদের বিরুদ্ধে আজই ব্যবস্থা নিতে মির্জা আজমের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। এর আগে, বুধবার (২০শে সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক জরুরি বর্ধিত সভায় মির্জা আজম বলেছিলেন, কিছু নেতাকর্মী ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসে চেহারাটা দেখিয়ে সমাবেশ শুরুর আগেই চলে যান। নিজের পছন্দের নেতা যে, আছে তার ছবি দিয়ে ব্যানার করেন তারা।
সমাবেশে আসার পর বারবার ব্যানার নামাতে বলা হলেও নামান না, এটা দৃষ্টিকটূ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট ও ওয়ার্ডে কমিটি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই নেতা হতে আসেন, নিজের পরিচয় দিতে চান। নিজের পরিচয় ও ছবি দিয়ে ব্যানার বানিয়ে সমাবেশে আসেন ব্যানার নামাতে বলার সঙ্গে সঙ্গে নামাতে হবে। যারা ব্যানার ধরে রাখেন তারা জানেনই না কার ব্যানার ধরে রেখেছেন। তাই বারবার বলার পরও ব্যানার নামান না। মির্জা আজম বলেন, হয়তো কিছু টাকা দিয়ে ব্যানার ধরতে বলা হয়েছে, নেতার নাম জানেন না। কামলা হিসেবে তিনি ব্যানার ধরে রাখছেন। এই ধরনের কোনো লোক সমাবেশে আনবেন না। কামলাদের মিটিং-সমাবেশে নিয়ে আসবেন না, কর্মীদের মিটিংয়ে নিয়ে আসবেন।