আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর পর ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতেও একই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তবে টানা তিন মেয়াদেও তা পূরণ করা যায়নি। বর্তমানে নিরক্ষরমুক্ত করার সরকারি সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত করার কথা বলা হলেও তা সম্ভব হবে না।
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানান, দেশে সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের নাগরিকদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে এখনও প্রায় ২৩ দশমিক ২ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, শতভাগ জনগোষ্ঠীকে সাক্ষর করাতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
দেশে সাক্ষরতা-সংক্রান্ত কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (বিএনএফই)। তবে প্রতিষ্ঠানটি আশার বাণী শোনাতে পারছে না। জানতে চাইলে এর মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, তাদের জনবল সংকট রয়েছে। ৬৪ জেলার মধ্যে তাদের মাত্র ২৭ জেলায় কর্মকর্তা কর্মরত। বাকিরা অবসরে গেলেও নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ১০টি প্রকল্প তৈরি করে পাঠিয়েছিলেন। অনুমোদন না হওয়ায় নতুন কোনো কার্যক্রম নেই। বর্তমানের নিরক্ষরমুক্ত করার সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাক্ষরতার হার বাড়ছে না।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৫.৬ শতাংশ। তবে গত জুলাইয়ে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রায়োগিক সাক্ষরতা নিরূপণ জরিপ বলছে, দেশে প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার ৬২.৯২ শতাংশ। যিনি পঠন, অনুধাবন, মৌখিক ও লিখিতভাবে বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা, যোগাযোগ স্থাপন এবং গণনা করতে পারেন, তাঁকেই প্রায়োগিক সাক্ষরতার আওতায় হিসাব করা হয়েছে। সে হিসাবে প্রায় ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, মন্ত্রণালয় তো প্রতিবছরই একটি তথ্য দেয়। এটা কীসের ভিত্তিতে করা হয় তা জানা যায় না। এ তথ্য সঠিক মেনে নিলেও প্রতি চারজনে একজন লেখাপড়া জানে না। এটাও অনেক। প্রায়োগিক সাক্ষরতা না থাকলে এসডিজি কঠিন হবে।
তিনি বলেন, আসলে সাক্ষরতা বাড়াতে সরকারের তো কর্মসূচি নেই। এখাতে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ একেবারেই কম। এটা ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে।
২০৩০ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত হওয়ার বিষয়ে ‘যথেষ্ট সন্দেহ’ আছে বলে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, কাগজকলমে দেখানো আর বাস্তবতা এক নয়। হয়তো এটি বাড়বে তবে আমাদের সাক্ষরতা বাড়ানোর প্রবণতা খুবই ধীর। আবার ৮০ থেকে ৯০ করা যত সহজ, ৯০ থেকে ৯২ করা আরও কঠিন। সরকারের পদক্ষেপগুলো আরও কার্যকর না করলে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, দৈনন্দিন জীবনে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতেও সাক্ষরতা দরকার। যেসব দেশে সাক্ষরতার হার ভালো, তাদের স্বাস্থ্য ভালো, প্রোডাক্টিভিটি ভালো, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা বাড়ে। এটি মানবসম্পদ উন্নয়নেও জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, সাক্ষরতা ও উন্নয়ন নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। এর একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি চিন্তা করা যায় না। বর্তমান সরকারের নানামুখী কর্মসূচির কারণে পূর্বের তুলনায় সাক্ষরতার হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। শতভাগ জনগোষ্ঠীকে অক্ষরজ্ঞান দিতে বর্তমান সরকারের নিরলস প্রয়াস অব্যাহত আছে।