হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসের লকার রুম থেকে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় তিনজনকে ঘিরে সন্দেহ তদন্তসংশ্লিষ্টদের। তারা হলেন– সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও সিপাহী নিয়ামত হাওলাদার। গত সোমবার রাতে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা এলোমেলো বক্তব্য দিয়েছেন। তারা চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করতে চাননি। তদন্তসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দুঃসাহসিক এ চুরির নেপথ্যে থাকা রাঘববোয়ালের নাম বেরিয়ে আসতে পারে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রধান সন্দেহভাজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম শাহেদ কাস্টমসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এই প্রভাব কাজে লাগিয়ে এক বছর ধরে শাহেদসহ একটি সিন্ডিকেট ভল্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। সম্প্রতি তারা দায়িত্ব ছাড়তে গড়িমসি করছিল। নতুন কর্মকর্তারা দায়িত্বে আসার পরই চুরি ও প্রতারণার বিষয়টি ধীরে ধীরে উঠে আসতে থাকে।
তবে প্রযুক্তিগত তদন্তে দেখা গেছে, ঘটনার দিন রাতে ও পরদিন সন্দেহভাজন তিনজন বিমানবন্দর এলাকায় একত্র হন। তদন্তসংশ্লিষ্টদের প্রাথমিক ধারণা, গোপন কোনো পরিকল্পনা করতে তারা একত্র হয়ে শলাপরামর্শ করেছিলেন। এদিকে কাস্টমসের লকার রুম ঘিরে নানা অব্যবস্থাপনার তথ্য উঠে আসছে। একই গুদামে মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার, কাপড়চোপড়, ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন জব্দ মালপত্র রাখা হতো। পাশে আরেকটি ভল্ট খালি থাকলেও তাতে স্বর্ণ রাখা হতো না। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেট ও পুরান ঢাকায় চোরাই স্বর্ণ বিক্রি হওয়ার তথ্যও মিলেছে।
বিমানবন্দরের মতো প্রথম শ্রেণির কেপিআইভুক্ত স্পর্শকাতর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে ভল্ট ভেঙে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজির স্বর্ণ গায়েব করে দেওয়া হয়।
চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে কাস্টমসের চার কর্মকর্তা ও চার সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা হলেন– সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ রানা, সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম, আকরাম হোসেন এবং সিপাহি রেজাউল করিম, মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার। তবে তাদের মধ্যে শাহেদ, শহিদুল ও নিয়ামত একাধিক সময় রহস্যজনক কারণে বিমানবন্দর এলাকায় একত্র হন। তারা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ রানা ও আকরাম হোসেনকে ফাঁসানোর চেষ্টাও করেন
আরেক কর্মকর্তা জানান, ভল্ট ঘিরে নানা অব্যবস্থাপনা ছিল। জব্দ স্বর্ণালঙ্কার কেন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে না পাঠিয়ে লকার রুমে রাখা হতো, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে।
ডিবির উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, ‘অব্যবস্থাপনার কারণে লকার রুমে যদি কোনো কারণে আগুন লাগত, তাহলে আলামত রক্ষার উপায় থাকত না। চুরির ঘটনায় ভেতরের কেউ জড়িত। তিনজনের ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ বেশি।’
পুলিশ হেফাজতে থাকা চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চার সিপাহি জিজ্ঞাসাবাদে গরমিল তথ্য দিয়েছেন। সিসিটিভি ক্যামেরা বিকল থাকার বিষয়েও এলোমেলো বক্তব্য দিয়েছেন। এ ছাড়া স্বর্ণ চুরির সময় গতিপথ ও সেখান থেকে আলামত গায়েবের ব্যাপারে তাদের ভাষ্য পরস্পরবিরোধী। ডিএমপির বিমানবন্দর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
লকার রুমের পুরোনো ব্যবস্থাপনার বদলে আধুনিকায়নের কাজে হাত দেন ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার। গুদামের অটোমেশনের কাজ শুরু হয়। পুরোনো লকার বদলে আধুনিক ও অধিক নিরাপত্তাসংবলিত লকারের ব্যবস্থা করেন কমিশনার। গুদামে থাকা স্বর্ণ গণনার কাজও শুরু হয়েছিল। এরপরই চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে।
তদন্তসংশ্লিষ্টদের ধারণা, অল্প অল্প করে অনেক দিন ধরে লকার রুম থেকে নানা কৌশলে স্বর্ণ গায়েব করা হয়েছে। লকার রুমের অটোমেশন করার কার্যক্রম শুরু হলে ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সুড়ঙ্গ তৈরির নাটক করা হয়।