ঢাকাশনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অরুণাচল ও চীনের নয়া মানচিত্রের রাজনীতি – মো:নিজাম উদ্দিন 

মতামত ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
আগস্ট ৩০, ২০২৩ ১২:২০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

এক.

ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের একটি প্রদেশ অরুণাচল। প্রদেশটির মোট আয়তন ৮৩,৭৪৩বর্গ কি.মি।জনসংখ্যা প্রায় চৌদ্দ লাখ।চীনের সাথে অরুণাচল প্রদেশের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে এগারোশ উনত্রিশ কি.মি।

চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের(২৮ আগস্ট) বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা এক গুরুত্বপূর্ণ খবর দিয়েছে ২৯অগাস্ট ।সম্প্রতি চীন তার নতুন প্রকাশিত রাষ্ট্রীয় মানচিত্রে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ পুরোটাকেই নিজেদের বলে দাবি করেছে!

 

১৯৬২ সালের ভারত -চীন যুদ্ধে ভারতের যে ভূখণ্ড চীন দখল করে আকসাই চীন নামে ডাকে সেই ভূখণ্ডকেও ভারত তার নিজের বলেই দাবি করে।সেই আকসাই চীন ভূখণ্ডকেও চীনের নতুন মানচিত্রে নিজেদের বলে দেখানো হয়েছে।যা একটি বিতর্কিত জায়গা।উভয়ই যার মালিকানা দাবী করে।

 

চীন মনে করে অরুণাচল প্রদেশ দক্ষিণ তিব্বতের অংশ।তিব্বতি ধর্মগুরু দালাইলামাকে আশ্রয় দেওয়ায় চীন ভারতের উপর দশকের পর দশক ক্ষেপা।ভারতের একটা আস্ত প্রদেশকে চীনের নতুন মানচিত্রে ডুকিয়ে দেওয়া ভারতের সার্বভৌমত্বের উপর নিঃসন্দেহে একটা ‘সফ্ট এটাক’।কূটনৈতিক ভাষায় যাকে ‘কার্টোগ্রাফি এগ্রেশন’ বা মানচিত্রে আক্রমণ বলে অবিহিত করা হয়।

দুই.

ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোর স্বাধীনতাকামীদের দমন করতে গিয়ে ভারত এমনেতেই খুব ক্লান্ত। আওয়ামী সরকারকে মোদি সরকারের ব্লাইন্ডলি সাপোর্ট করার একটা বড় কারণ আওয়ামী সরকার ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের স্বাধীনতাকামীদের ভারতের হাতে খুব সহজেই তুলে দিয়েছে।এ অঞ্চল নিয়ে এমনেতেই ভারতের ঘুম হারাম।নতুন মানচিত্রে চীন অরুণাচলকে চীনের অংশ দাবি করায় ভারতের উদ্বেগ উৎকন্ঠা ডেফিনিটলি বাড়বে।বাংলাদেশ সরকার ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের স্বাধীনতাকামীদের খুব সহজে ভারতের হাতে তুলে না দিয়ে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের দাবি আদায়ের একটা ‘বার্গেনিং টুল’ হিসাবে ব্যবহার করতে পারতো।অতি আবেগের রাজনীতির কারণে বাংলাদেশ সেই সুযোগ হারালো।

 

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারা দুনিয়া এখন দুভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে।ভারত এবং চীনের সম্পর্ক দা কুমড়ার হলেও দুটি দেশই আওয়ামী লীগ সরকারকে ব্লাইন্ডলি সাপোর্ট করে যাচ্ছে।আমেরিকা, ইইউ,জাতিসংঘ সহ পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে,সুষ্ঠু অংশ গ্রহণ মূলক নির্বাচন চায়।

তিন.

চীন যেভাবে সীমান্তে ভারতকে আক্রমণ করে এবং সর্বশেষ কোনো রাখঢাক না করেই চীনের মানচিত্রে যেভাবে ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের দাবি করে বসলো এটা ভবিষ্যতে আরও বড় কূটনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করতে পারে। এ অবস্থায় ভারতের একটা শক্তিশালী বড় ভাই প্রয়োজন।যে ব্যাকআপটা আমেরিকা এতোদিন ভারতকে দিয়ে আসছে।চীনের আগ্রাসন থেকে ভারতের নিরাপত্তার জন্যই আমেরিকার সাপোর্ট ভারতের জন্য খুব জরুরী। ভারত এবং আমেরিকার কোনো দ্বন্দ্ব, মনোমালিন্য এবং দূরত্ব চীনকেই লাভবান করবে।যা ভারত এবং আমেরিকা কেউই হতে দিবে না।চীন অরুণাচল প্রদেশটাকে নিজেদের দাবী করে ভারতকে আমেরিকার ডিপেন্ডেন্সির দিকেই ঠেলে দিল।এই প্রবণতা বাড়বে বলেই মনে হয়।চীনের নতুন মানচিত্র ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকি আরও বাড়িয়েই দিলো!

 

এ অবস্থায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারত কি আমেরিকার বিরোধীতা করার মতো ঝুঁকি নিবে?ইন্দো প্যাসিফিক রিজিওনে আগে থেকেই ভারত এবং আমেরিকার স্বার্থ অভিন্ন।সীমান্ত নিয়ে চীনের সাথে ভারতের সংকট পুরনো। অরুণাচলকে চীনের দাবি করে চীন ভারতকে খানিকটা উস্কানিমূলক বার্তাই দিল।এই সব ঘটনাবলী ভারতের কাছে আমেরিকার গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দিবে।বাংলাদেশে সুষ্ঠু এবং অংশ গ্রহণ মূলক নির্বাচনের লক্ষে আগামীতে আমেরিকার কোনো উদ্যোগের বিরোধিতা করা ভারতের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং ঘটনা হবে।

 

লেখক:রাজনৈতিক বিশ্লেষক