বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে প্রতিবেশী ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ভারত। দেশটির ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা দ্য হিন্দু সোমবার (২১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
দ্য হিন্দু জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত হতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করছে নয়াদিল্লি। এর অংশ হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেছে মোদি সরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের কয়েকদিন পরই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও দলটির কয়েকজন নেতাকে ভারতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলের এই সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কয়েকদিন পরই জি-২০ জোটের সম্মেলনে ‘আমন্ত্রিত অতিথি’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে যাবেন।
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে হিন্দুর প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির মূলকেন্দ্রে আছে বিএনপি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবিটি।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে আসছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। কারণ ২০১১ সালেই সংসদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে সংবাদমাধ্যমটি। দ্য হিন্দু জানিয়েছে, জিএম কাদের বিএনপি বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারও পক্ষে কথা বলেননি। দুই দল থেকেই একটি সমদূরত্ব বজায় রেখেছেন তিনি। তবে বর্তমান সমস্যা সমাধানে সংলাপের ওপর জোর দিয়েছেন কাদের।
জিএম কাদের টেলিফোনে বলেছেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের জন্য সরকারের এগিয়ে আসার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই সব পক্ষ বসুক এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করুক।’
তবে জিএম কাদের বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি সমর্থন জানাননি। তিনি বলেছেন, ‘তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছে, কিন্তু এই সরকারের আকার কেমন হবে সেটি পরিষ্কার করছে না।’
এর বদলে তিনি তৃতীয় কোনও বিকল্পের পরামর্শ দিয়েছেন। আর এই বিকল্পটি জাতীয় পার্টির কাছে আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। যখন সব দল সংলাপে বসবে তখন সেটি জানাবেন বলে জানিয়েছেন কাদের। ধারণা করা হচ্ছে, তার এ পরিকল্পনাটি অনেকটা ‘আপসের’ হবে।
জিএম কাদের বলেছেন, ‘আমাদের মাথায় একটি ফর্মুলা আছে। যখন সব দল সংলাপে বসবে, তখন আমরা সেটি সামনে আনব।’
গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। এর সঙ্গেই যুক্ত হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের ভারত সফর। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেসম্যান রিখ ম্যাককোরমিক এবং ইডি কেসের সফরের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে তারা দুজন বাংলাদেশে আসেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর ওই দুই কংগ্রেসম্যান গত ১৭ আগস্ট দিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে (ওআরএফ) আসেন। সেখানে তারা একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন।
এর আগের দিন ওআরএফে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন প্রজেক্টের মিডল ইস্ট ফোরামের পরিচালক ক্লিফোর্ড স্মিথ একটি বৈঠক করেন। দ্য হিন্দু দাবি করেছে, ওই বৈঠকে তিনি জানান, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কী সিদ্ধান্ত নেবে সে ব্যাপারে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে।
এছাড়া ওই বৈঠকে তিনি ইসলামিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিয়ে কথা বলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠনকে এক সময়কার ‘বিশ্বের সবচেয়ে উগ্রবাদী সংগঠন’ হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি।