ঢাকাবৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মাদ্রাসার ছাত্র মারজুক রাসেল বললেন ” আমি অনাহারী ” —

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
আগস্ট ২০, ২০২৩ ১:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাবা ছিলেন পাটকলের তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী। জন্ম গোপালগঞ্জে হলেও থাকতেন দৌলতপুরে নির্ধারিত কোয়ার্টারে। অষ্টম শ্রেনী পড়াকালীন ‘জনবার্তা’ পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা ছাপা হয়। তখন তিনি একজন মাদ্রাসার ছাত্র। ১৯৯৩ সালে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে খুলনা থেকে ঢাকা আসেন তিনি। কবি শামসুর রাহমানের বাড়িতে যান। ডোরবেল বাজাতে কবি নিজেই দরজা খোলেন। তিনি কবিকে বলেন, ‘আমি অনাহারী’। এই শব্দ দুটি কবির একটি বইয়ের শিরোনাম। টুঙ্গিপাড়ায় কেবল দু-একবার দেখা হওয়া তরুণটিকে কবি হয়ত ভালো করে চিনতেও পারেননি। কিন্তু তার মুখে নিজের বইয়ের নাম শুনে এবং তরুণের সত্যিকার অনাহারী চেহারা দেখে কবি শামসুর রাহমান তাকে ভেতরে নিয়ে যান। ছেলেটার জন্য তিনি খাবার টেবিলে সাজান অনেক রকমের খাবার।

বেঁচে থাকার জন্য সিনেমার টিকিট বিক্রি করেছেন, ফুটপাথে হকারগিরি করেছেন। তখন তিনি থাকতেন তোপখানা রোডের একটি গাড়ির গ্যারেজে। এর মধ্যে একটি কনস্ট্রাকশন হাউজে কাজ পেয়ে যান তিনি। এরপরই যাওয়া শুরু করেন আজিজ মার্কেটে। পরিচিত হতে থাকেন নবীন-তরুণ লেখদের সঙ্গে। সে সময় কবিতা, গল্প লেখার পাশাপাশি শুরু করেন গান লেখা। গানের সংখ্যা যখন অনেক হলো তখন সেগুলো নিয়ে সে সময়ের বিখ্যাত সুরকারদের সঙ্গে দেখা করেন।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না। সবাই শুধু আশ্বাসই দিয়েছে, এর বেশি কিছুনা। এর মাঝে ফারুক মামুনের সাথে সাক্ষাত হয় তার। তিনি তাকে সংবাদমাধ্যমে চাকরির সুযোগ করে দেন। পত্রপত্রিকায় লিখা শুরু করেন। এরই মধ্যে সঞ্জীব চৌধুরীর সাথে দেখা করার সুযোগ মেলে। তিনি তার লেখা পড়ে নগরবাউল জেমসের সাথে দেখা করার জন্য বলেন। তখন জেমসের ‘লেইস ফিতা লেইস’ অ্যালবামের কাজ চলছিল। তিনি লেখা পড়ে তাঁর সাথে সার্বক্ষণিক রাখেন এবং গুরু_জেমসের জন্য গান লিখতে শুরু করেন। তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গুরু_জেমসের বেশকিছু জনপ্রিয় গান লিখেন যার মধ্যে মীরা বাঈ, পত্র দিও, শরাবে শরাব, হা ডু ডু, আমি ভাসব যে জলে তোমায় ভাসাবো সেই জলে, দে দুরে, বাইসকুপের খেলা, রাখে আল্লাহ মারে কে, হাউজি, তেরো নদী সাত সমুদ্র…… এছাড়াও আইয়ুব_বাচ্চু স্যারের বিখ্যাত একটা গান আমিতো প্রেমে পড়িনি প্রেম আমার উপরে পড়েছে,ললনা, তোমার চোখে দেখলে বন্ধু, পান্থকানাই এর গোল্লা, ঈশাণ কোণের বায়ু, আসিফ_আকবরের ও আমার পাগলা ঘোড়া রে, সবার বাংলাদেশ, তুমি হারিয়ে যাওয়ার সময় আমায় সঙ্গে নিও, নারী, বদলে, মিল, মাইথ, জলকন্যা, ফুঁ #হাবিব_ওয়াহিদের সেই বিখ্যাত গান দ্বিধা[ ভিতর বলে দূরে থাকুক বাহির বলে আসুক না], আরেফিন_রুমির দোলনা তার লেখা উল্লেখযোগ্য গানসমূহ। এখনো লিখছেন!

তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয় ‘শান্টিং ছাড়া সংযোগ নিষিদ্ধ’(২০০০), এরপর আসে ‘ চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো―মারজুক রাসেল’ (২০০১), তৃতীয় বইটি হলো, ‘বাঈজি বাড়ি রোড’(২০০২), চতুর্থ বইটি হলো ‘ছোট্ট কোথায় টেনিস বল’(২০০৫), মাঝখানে একটা দীর্ঘ বিরতি তারপর আসে দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর―মারজুক রাসেল (২০২০)
হাওয়া দেখি, বাতাস খাই―মারজুক রাসেল (২০২২)

মোস্তফা_সারওয়ার_ফারুকীর ব্যাচেলর (২০০৪) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম অভিনয়ের সূচনা হয় তার। এছাড়াও মেইড ইন বাংলাদেশ(২০০৭), রাত্রীর যাত্রী (২০১৭), সাপলুডু( ২০১৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তিনি বহু টেলিভিশন নাটক,বিজ্ঞপনেও অভিনয় করেন। তার অভিনীত প্রথম টেলিভিশন নাটক মোস্তফা_সারওয়ার_ফারুকীর ‘আয়না মহল’।
এছাড়াও একাধিক মিউজিক ভিডিওতেও কাজ করেছেন তিনি ঘুড়ি তুমি কার আকাশে উড়ো(২০১২), স্মৃতিকথা(২০১৭) ইত্যাদি……

এতগুলো সময় কেটে গেলেও আজো ঠিক প্রথম সময়ের মতই পাগলাটে। খ্যাতির সাগরের দুর্বার ঢেউয়ে তিনি যে পথ হারিয়ে বদলে যাননি – সেটা তাঁর জীবন যাপন, স্যোশাল মিডিয়ায় তাঁর লেখালেখি দেখলেই পরিস্কার হয়ে যায়। হবে নাই বা কেন, তিনি তো ‘অনেক-কিছুই-ছাইড়া-আসা-লোক’!

কবি,গীতিকার, মডেল, অভিনেতা। একজন ‘মারজুক রাসেল’ যাকে এই পর্যন্ত আসতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

লেখা: সংগৃহীত