ঢাকাবৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইহুদীদের লিলিথীয় উপাখ্যান

সাহিত্য ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
আগস্ট ৫, ২০২৩ ৪:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ইহুদী পুরাণ মতে স্বর্গের আদি নারী লিলিথ। আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে লিলিথীয় উপাখ্যানের উৎপত্তি। তিন হাজার বছর আগে একটি খোদাইকৃত সিরীয় লিপিতে মূলত লিলিথের অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল, ‘O flyer in a dark chamber, go away at once, O Lili!’ অর্থাৎ লিলিথ ছিল অপশক্তি। শয়তানের সঙ্গিনী।

 

আদম-ইভের উপাখ্যান আমরা সবাই জানি। কিন্তু ইহুদী পুরানে আরো একজন নারীর অস্তিত্ব মেলে। যার আবির্ভাব ঘটেছিল ইভেরও আগে। যার নাম লিলিথ। সে ছিল আদি ও পরিপূর্ণ, পুরুষের সমকক্ষ এক নারী।

 

লিলিথের উৎপত্তি আদমের পাঁজর থেকে হয়নি। তার জন্ম হয়েছিল মাটি থেকে। স্বয়ং ঈশ্বর আদমের একাকিত্ব ঘোচাতে লিলিথকে সৃষ্টি করেন একই রকমের সামর্থ্য ও আত্মমর্যাদাবোধ দিয়ে। প্রথম ‘বুক অব জেনেসিস’ অনুসারে নারী-পুরুষ দুজনকে একইসাথে সৃষ্টি করেন ঈশ্বর। নারী ও পুরুষের যে দ্বন্দ্ব তা আসে অনেক পরে।

 

দ্বন্দ্বের শুরু হল কারণ সৃষ্টির শুরু থেকেই পুরুষ সবকিছুর উপর অধিকার চায়, মাতব্বরি ও নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সে যেকোনো মূল্যে সবকিছুর শ্রেষ্ঠ হতে চায়, এমনকি জোর জবরদস্তি করে হলেও।

 

লিলিথও আদমের মত একই উন্নাসিক মানসিকতার অধিকারী। লিলিথ কিছুতেই আদমের নিয়ন্ত্রণে থাকতে চাইল না। বরং সে সবকিছুতে সমান অধিকার দাবি করল। আদম এই দাবি কিছুতেই মেনে নিল না। ফলে দুজনের মধ্যে সংঘাত বেঁধে গেল। এরপর লিলিথ সমকক্ষতার অধিকার নিয়ে আদমের একাধিপত্যকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করল।

 

প্রত্যাখ্যাত হয়ে আদম নিজের শক্তি প্রয়োগের জন্য চেষ্টা শুরু করল। লিলিথ তখন স্বর্গ ত্যাগ করে পৃথিবীতে চলে গেল। আদম উপায় না দেখে ঈশ্বরকে নালিশ জানাল। ঈশ্বর তখন তিনজন স্বৰ্গীয় দূত পাঠালো লিলিথকে ধরে নিয়ে আসতে। লিলিথ যদি আসতে অস্বীকার করে তবে সে ঈশ্বরের আজ্ঞায় অভিশপ্ত হবে। প্রতিদিন তার একশোটা করে বাচ্চা মারা যাবে।

 

সৃষ্টির শুরুতেই নারীর আবেগের উপর হানা হল চরম আঘাত। লিলিথ পাত্তা দিল না। সে স্বর্গে ফিরে যেতে অস্বীকার করল। স্বর্গীয় দূতরা ফিরে গেল।

 

এরপর লিলিথকে তুলে ধরা হয় ব্যভিচারিণী, খুনি, শিশু ভক্ষণকারী ও শয়তানের স্ত্রী হিসাবে। শোনা যায় লিলিথের অভিশাপ থেকে গর্ভবতীদের রক্ষার জন্য কট্টর ইহুদিদের মাঝে এখনও তাবিজ-কবজের প্রচলন আছে। পুরুষদের মধ্যে লিলিথ সম্পর্কে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল আতঙ্ক। ইহুদিদের একটি পবিত্র গ্রন্থ তালমুদ অনুযায়ী লিলিথ শুধুমাত্র অভিশপ্তই, সে অনিয়ন্ত্রিত যৌনতার প্রতীকও বটে।

 

ব্যাবিলনিয় তালমুদ বা পবিত্র গ্রন্থ অনুসারে, পুরুষকে একা বাড়িতে রাত কাটাতে নিষেধ করা হয়েছে, তার উপর অভিশপ্ত লিলিথ ভর করতে পারে। এরপর লিলিথ সেই পুরুষের সঙ্গ নিয়ে নতুন নতুন শয়তানের জন্ম দেবে। আসলে পুরুষ কখনো প্রথা বিরুদ্ধ কিছু করে না, তাকে দিয়ে করানো হয়। অভিশপ্ত লিলিথ এর জন্য দায়ী। পুরুষ কোন না কোন নারী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দুস্কর্ম করে।

 

লিলিথ নিজেকে কখনও শ্রেষ্ঠ দাবি করেনি। সে শুধু তার আত্মমর্যাদা চেয়েছে। অথচ তারপরেও তাকে অভিশপ্ত ও নিক্ষিপ্ত হতে হয় অন্ধকারে।

 

( বিশিষ্ট বামপন্থী নেতা মোতাহের হোসেন বাবুল এর ফেইসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)