ঢাকামঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা: দায় কার ভাই? || সিটিজি পোস্ট

মুহাম্মদ ইশাত মান্নান | সিটিজি পোস্ট
আগস্ট ৫, ২০২৩ ২:৪৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশের ছোট বা বড় সব শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব পড়ে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন বা পৌর কর্তৃপক্ষের। তবে এ নিয়মের একদম বাইরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সংক্ষেপে চসিক।

 

মুষলধারে কিংবা কয়েক মিনিটের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ডুবে যায় শহরের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল। এইযে এখন এই লেখাটি লেখার সময় আমার হাতে চা আর পাশে পানি আর পানি। গন্ধে ভরা এই পানি। চারপাশে ছোটোখাটো আমাজন নদী। আর এর মধ্যেই বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষকে পানি ঠেলে চলাচল করতে হয়। জলাবদ্ধতায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থবির হয়ে পড়ে যানবাহন চলাচল। আজতো শুনলাম বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বন্ধ।

 

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজে হাত না পড়ায় বর্ষা ছাড়াও শুষ্ক মৌসুমেও উন্মুক্ত খাল ও নালায় পড়ে অহরহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এরপরও সেবা সংস্থাগুলোর তেমন গরজ নেই। পরস্পরকে দোষারোপ করেই দায় এড়িয়ে গেছেন তারা। ফলে নগরবাসীর দুর্ভোগ আর ভোগান্তির যেনো শেষ নেই।

 

গত কয়েকদিন আর আজ থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরের বহদ্দারহাটে সিটি মেয়র রেজাউল করিমের বাসায় পানি ঢুকেছে। আমরা অনেকেই তা ভিডিও তে দেখেছি আর হেসেছি।

 

তাঁকে যতবার জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে সাংবাদিকরা প্রেশার দিয়েছে তিনি ততবার জলাবদ্ধতার জন্য মেগা প্রকল্পের সংশিষ্টদের

ওপর দোষ চাপালেন। তবে মেগা প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার মতো কোনো বাঁধ দেওয়া হয়নি। আর নগর পরিকল্পনাবিদরা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য না দিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন।

 

মেয়র গণমাধ্যমকে জানান, আমরা বারবার খাল থেকে বাঁধ অপসারণের জন্য বলেছি। মাটি যতক্ষণ খালে থাকবে ততক্ষণ পানি সরতে পারবে না। আবার কাজ শেষ না করে বাঁধ সরালেও সমস্যা।

 

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য চসিক মেয়র রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বৈঠকে আছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন। আবারো যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি

 

জানা যায়, ২০১৭ সালে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। ২০১৮ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

 

এ বিষয়ে আমার এক বন্ধু সাংবাদিক জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস তাকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। আপনি জলাবদ্ধতা প্রকল্পে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলুন।

 

তো এভাবেই “জানি না” –  “আরেকজনের সাথে কথা বলুন”  চলছে…

 

চায়ের দোকানে বসে যেহেতু লিখছি তাই আশপাশের লোকজন ছাত্র মুরব্বি ব্যবসায়ী চাকরিজীবী বেকার অনেকেই আছেন। সবার থেকে জিজ্ঞেস করার পর সবার মনে একটাই ভাবনা -শহরের জলাবদ্ধতার সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব দূর করাউচিত, তবে এটি কে করবে তা তারা জানেন না। কেউ বলে সিটি কর্পোরেশন কেউ সিডিএ। এখানে ও দেশের রাজনীতির মতো দুভাগে বিভক্ত।

 

অনেকের মতে, বন্দরনগরী হিসেবে এই সমস্যাটাকে যেভাবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করাউচতি ছিল সেভাবে করা হয়নি এবংএখনো গুরত্ব দেয়া হচ্ছে না।

 

আমদানি-রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের মতে চট্টগ্রাম শহরে এমন জলজটের পরিস্থিতি দেশের বাইরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেহেতু এখানে বন্দরে বহু পণ্য আনা-নেয়ার বিষয় থাকে ফলে জলাবদ্ধতার বিষয়টি এ ক্ষেত্রেও এক ধরনের সমস্যা তৈরি করে।

 

কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামের উন্নয়নের বিষয়টি একটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয় হয় দাড়িয়েছে। কারণ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একেকভাবে কাজ নিয়েএগোয় এবংএদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। ফলে শহরের সমস্যা নিরসনে কোনো কাজই এগুচ্ছেনা বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

সমকালের গত জুলাইয়ের একটা রিপোর্ট চোখে ভাসছে “চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনের চার প্রকল্পে সমন্বয়হীনতা” এই শিরোনামে।

 

প্রথমেই সেখানে উল্লেখ আছে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকায় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তিন সংস্থা– চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। অভিযোগ উঠেছে, এই তিন সংস্থার কাজে একদমই সমন্বয় নেই। কাজ চলছে যার যার মতো করে। ফলে প্রকল্পগুলোয় অগ্রগতি নেই, নগরীর জলাবদ্ধতাও দূর হচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের একাধিক তাগিদেও কাজে সমন্বয় আসছে না এবং অনেকেই মনে করছেন তা আর আসবেও না।

তবুও সিডিএ ও চসিক একে অপরকে দোষারোপ করেই চলছে। এখন আবারো আম জনতার পাশপাশি আমারো প্রশ্ন তাহলে দায় কার ভাই??