ঢাকামঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সরকার বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপে চাপ অনুভব করছে না : ওবায়দুল কাদের

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
আগস্ট ৪, ২০২৩ ১১:০১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সরকার দেশবাসীর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপে সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে না।

বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাক্ষাৎ এবং বৈঠক করেন। সাক্ষাৎ এবং বৈঠক শেষে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সাক্ষাৎকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যের কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার, শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সংসদ ও নির্বাচন কমিশনের বিলুপ্তি নিয়ে কোনো কথাই বলেননি। তাদের চাওয়া– বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। আমাদেরও চাওয়া সেটাই, যা দেশের জনগণের কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সংগ্রামের সোনালি ফসল। গণতন্ত্রের পূর্ণতার পথে যেটুকু অর্জন, সেটা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হয়েছে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগই করেছে। সেই গণতন্ত্রকে নিরাপদ রাখা ও রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে চলেছি আমরা।

 

 

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের অংশ হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এই বৈঠক করেন। সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে পৌঁছালে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অষ্টম তলায় সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন পিটার হাস। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার মিলনায়তনে আলাদা ব্রিফিং করেন তারা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমেরিকার সঙ্গে এ দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভালো পর্যায়ে রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের সঙ্গে আমেরিকার লেনদেন রয়েছে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও বিরাজমান। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছিলেন। প্রথমবারের মতো এই কার্যালয়ে আসায় তিনি এটি ঘুরেও দেখেছেন।

বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। পিটার হাসের সঙ্গে আমাদের নির্বাচন বিষয়ে কথা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আমরা সব সময় যেটা বলি, সেটাই বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বক্তব্য একটাই। সেটা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। সেটাই দেশের জনগণের কাছে আমাদের ওয়াদা।

আগের দিন ২৫টি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে সরকারবিরোধী দলটির বিভিন্ন অভিযোগ-সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা আমাদের মেহমান। সেখানে আমরা কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই করতে যাইনি। এটা আমাদের চর্চায় নেই। তাদের কথা তারা বলেছেন, আমাদের কথা আমরা বলেছি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ বিষয়ে কোনো কথাই হয়নি।

আগামী নির্বাচন বিষয়ে বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপে সরকার কোনো ধরনের চাপে আছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে আমরা আমাদের লক্ষ্যে অটুট। এখানে বাইরের কোনো চাপের বিষয় নেই। চাপের কথা যদি বলেন, তাহলে আমরা বিবেকের চাপ অনুভব করছি। আওয়ামী লীগ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের কারাদণ্ডের রায় নিয়ে দলটির নেতারা ‘গৎ বাঁধা বক্তব্য’ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা এটাকে ‘ফরমায়েশি রায়’ বলছেন। এটা ছাড়া আর কী-ই বলার আছে তাদের? এটাই এখন বিরোধী দলের (বিএনপি) ভাষা।

তারেক-জোবাইদার রায় নিয়ে বিএনপির বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, গত ১৪ বছর ধরেই তো তাদের বৃহত্তর আন্দোলন দেখছি। বিএনপি নেতাকর্মীরা এই ১৪ বছরে দৃশ্যমান কোনো আন্দোলনই করতে পারেননি। তারা তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার রায় ও গ্রেপ্তারের পর তাঁর মুক্তির দাবিতে ৫০০ লোকের মিছিলও করতে পারেননি। এখন জোবাইদা বা তারেকের জন্য আর কী-ই বা করতে পারবেন?

সংকট নিরসনে আলোচনায় বসার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি নির্বাচন কমিশনের আহ্বান-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কী করবে না করবে, কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা তাদের নিজস্ব বিষয়। এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয় নয়। তাদের দায়িত্ব অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা।

এর আগে ব্রিফিংয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, মূলত আমাদের নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবে সব দলের মতো আওয়ামী লীগের সঙ্গেও বৈঠক করেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়। যেখানে কোনো সংঘাত হবে না। মিডিয়াসহ সবার নিরাপত্তাও প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকার, মিডিয়া, সুশীল সমাজ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল সবাই তাদের ভূমিকা রাখতে পারবে বলেও তাদের প্রত্যাশা।

বিএনপির প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বেশি সখ্য দেখাচ্ছে কিনা– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে না। কারও পক্ষে কাজও করছে না। আরেক প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আমরা ভাবছি না।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত।