জীবন থেকে নেওয়া গল্পেও থেকে যায় কিছু ‘গালগল্প’। ফিচার ফিল্মেও যাত্রার গলা কাঁপা ‘ডায়ালগ’ ঢুকে যায়। তামিমের অবসরের ঘোষণায়- ‘হুট করে নয়’, ‘অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম’, ‘পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি’, বাক্যগুলো থাকলেও তাতে আবেগ ছিল, ছিল গলা ধরে আসা, চোখ ভিজে যাওয়া কান্না।
তামিমের অবসর ঘোষণা ছিল দেশের ক্রিকেট ভক্তদের মাথায় আকাশ ভেড়ে পড়ার মতো। অবসর নিয়ে ‘গুতাগুতি’ না করার আহ্বান জানালেও তাকে নিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা। তার স্ট্যাটাসে ছিল অবিশ্বাসের সুর। ছিল প্রশ্ন, ‘আসলেই কি চালিয়ে যেতে পারছিস না? নাকি কোনও চাপ তোকে বাধ্য করেছে!’
তামিমের অবসরে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত জরুরি বৈঠক করেছেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ অন্য বোর্ড কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে বিসিবি বস বারবার বলেছেন, এটা তামিমের আবেগি সিদ্ধান্ত। এটা অগ্রহণযোগ্য। তাকে দলের এশিয়া কাপে, বিশ্বকাপে দরকার। তার এমন অবসর দেশের ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর। তামিমের এমন অবসর মানায় না।
নেতৃত্ব ছাড়ার চাপ হয়তো তামিমের ওপর ছিল। যার আভাস বৃহস্পতিবার রাতে বিসিবি সভাপতির বক্তব্যে পাওয়া গেছে, “আমার কাছে জানতে (একজন বিসিবি পরিচালক) চেয়েছে বিশ্বকাপের অধিনায়ক কে হবে? আমি জানিয়েছি, ‘কে হবে মানে, অধিনায়ক তো তামিম আছে।’ অন্য কাউকে ক্যাপ্টেন করার কথা মাথায়ই আসেনি।” তামিমের নেতৃত্ব নিয়ে বোর্ড সভাপতির মাথায় কিছু না আসলেও অন্যের মাথায় যে এসেছে, তার কিছুটা প্রমাণ এখানে মেলে।
তামিমের বলা, ‘শতভাগ ফিট নই, তবু খেলবো’ (আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে) কথাটা হয়তো বিসিবি সভাপতি পাপন সহজে মানতে পারেননি। তামিমের বয়সী ক্রিকেটাররা এক-আধটু ইনজুরি নিয়ে খেলেন, দমটা তরুণদের মতো থাকে না। সেটা বিসিবি সভাপতি হয়তো সহজে বুঝতে পারেননি। কিন্তু বোর্ডের কেউ কিংবা কোচ হাথুরুসিংহেও সম্ভবত তার এমন অবসর চাননি।
তবু ‘আবেগে’ অবসর নিয়ে ফেলেছেন অধিনায়ক তামিম। যে আবেগকে অবসর ঘোষণার একদিন পরেই ‘ছক্কা’ মেরেছেন দেশ সেরা ওপেনার। তার প্রিয় ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে। নিজের ইগো কিংবা আবেগের কাছে পরাজিত হননি। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অবসর প্রত্যাহার করেছেন। কাদম্বীনির মতো ‘অবসর প্রত্যাহার করে তামিম প্রমাণ করেছেন, তিনি অবসর নিতে চাননি।’
আবার জাতীয় দলে খেলবেন জানিয়ে তামিম বলেছেন, “অনেকক্ষণ আমরা (প্রধানমন্ত্রী) আলোচনা করেছি। উনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন খেলায় ফিরে আসতে। আমি আমার অবসর এই মুহূর্তে উঠিয়ে নিচ্ছি। কারণ, আমি সবাইকে ‘না’ বলতে পারি, দেশের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিকে ‘না’ বলা অসম্ভব।” প্রধানমন্ত্রী তাকে এক-দেড় মাসের ছুটিও দিয়েছেন। সব ঠিক থাকলে ইনজুরি (কোমরের পুরনো ব্যথা) কাটিয়ে, মানসিকভাবে ফ্রি হয়ে এশিয়া কাপেই হয়তো খেলতে দেখা যাবে তাকে।