ঢাকাবৃহস্পতিবার, ৩রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রধান উপদেষ্টা হবেন বিশিষ্ট নাগরিক, সাবেক প্রধান বিচারপতি নন

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুলাই ৬, ২০২৩ ১২:৫০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

 সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতির মধ্যেই ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে’র রূপরেখার খসড়া তৈরি করছে বিএনপি। ১৯৯০ সালের মতো ‘জাতীয় ঐকমত্যে’র ভিত্তিতে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘দৃষ্টান্ত’কে সামনে রেখেই খসড়া রূপরেখা প্রণয়ন করছে দলটি। পাশাপাশি দ্বিতীয় পথ হিসেবে ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের মতো আন্দোলনের মুখে জনমতকে সম্মান জানিয়ে সংবিধান সংশোধনের পথ অনুসরণের প্রস্তাবও রাখবে তারা।

তবে নির্দলীয় সরকারের ‘প্রধান উপদেষ্টা’র পদে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বাছাইয়ের কথা থাকছে না বিএনপির রূপরেখায়। বরং ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’ একজন বিশিষ্ট নাগরিককেই ‘প্রধান উপদেষ্টা’ হিসেবে চায় বিএনপি।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। ইতোমধ্যে বিএনপির ২৭ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখায়ও তা উল্লেখ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আমলাকে খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো সামনে রেখেই নতুন পদ্ধতি তৈরি করছেন। পরে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ খসড়া রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। চলমান আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি দেখে আগামী আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বর মাসে নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে দলটি।

রূপরেখার খসড়া তৈরির সঙ্গে যুক্ত বিএনপির একজন নেতা জানান, ১৯৯০ সালের আদলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি। বর্তমান সংবিধানের মধ্যে থেকেও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব। ইতোমধ্যে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীবিষয়ক সেমিনারে তার আইনি ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলে সংবিধানের মধ্যে থেকেই সমাধান বের করতে পারে। কীভাবে পারে, তা আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে রূপরেখায় তুলে ধরবেন বলে জানান রূপরেখার ওই প্রণেতা।

রূপরেখার সঙ্গে জড়িত সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির খসড়া রূপরেখা ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিলুপ্ত ৫৮(খ), (গ) ও (ঙ) অনুচ্ছেদের ধারাগুলোর আলোকেই রচিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব অনুচ্ছেদে নির্দলীয় সরকার সম্পর্কে নিচের মৌলিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল: সংসদ বিলুপ্তির পর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ১১ সদস্যবিশিষ্ট নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা; তত্ত্বাবধায়ক সরকার যৌথভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ থাকবে; প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত হবেন; অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শক্রমে ১০ জন উপদেষ্টা মনোনীত হবেন; প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর অনুরূপ পদমর্যাদার অধিকারী হবেন; নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে এর কার্যাবলি, বিশেষত দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্য সম্পাদনে ব্যাপৃত থাকবে এবং নিতান্ত প্রয়োজন না হলে নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিরত থাকবে; তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে; নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের দিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত ঘোষিত হবে।

বিএনপি সূত্র জানায়, বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে নতুন প্রস্তাবের কারণ জানিয়েছে দলটি। দলটি মনে করে, সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যক্তিই হবেন। আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগকৃত প্রধান বিচারপতির দলটির প্রতি দুর্বলতা থাকাই স্বাভাবিক। তাই এবার নতুন ফর্মুলায় তারা প্রধান বিচারপতির বাইরে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন অন্য পেশাজীবীর সম্মানিত ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা করার প্রস্তাব দেবে।