ঢাকাবুধবার, ২রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এবার প্রকাশ্যে গণ অধিকারের রেজা-নুরের দ্বন্দ্ব

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুন ২০, ২০২৩ ৫:২৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দলের কর্তৃত্ব নিয়ে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হক নুরের মধ্যে মতবিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। দুই নেতা ফেসবুক ও গণমাধ্যমে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও দিয়েছেন। তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে আর্থিক ও রাজনৈতিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলেন।

এদিকে গণ অধিকার পরিষদ গতকাল সোমবার এক সভা শেষে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খানকে সর্বসম্মতিক্রমে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত করেছে।

রেজা কিবরিয়া ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এই সভা ও সিদ্ধান্ত অবৈধ। তিনি আশা করেন, নির্বাচন কমিশন তাঁর নামেই দল নিবন্ধন দেবে। 

গতকাল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দুই নেতা বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। বৈঠক থেকে বের হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন।

 

দলটির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সম্প্রতি ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের ইনসাফ কায়েম কমিটির আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করায় রেজা কিবরিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ হন নুর ও তাঁর অনুসারীরা। নুরের দাবি, ইনসাফ কায়েম কমিটি সরকারি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত। এই কমিটির বৈঠকে যাওয়া নিয়ে বিএনপির আপত্তি আছে।

বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দল হিসেবে তাঁরা ইনসাফের অনুষ্ঠানে যেতে পারেন না। এ নিয়ে গতকাল রাজধানীর গুলশানে রেজা কিবরিয়ার বাসায় বৈঠকে বসে গণ অধিকার পরিষদ। বৈঠকে নুর দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ইনসাফ কায়েম কমিটির বৈঠকে যাওয়ার বিষয়ে আপত্তি তোলেন। রেজা কিবরিয়া পাল্টা নুরের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুললে দুই নেতা বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

সেখান থেকে বের হয়ে নুর তাঁর অনুসারীদের নিয়ে করণীয় ঠিক করতে বৈঠক করেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক নেতা জানান, বৈঠকের শুরুতে ইনসাফ কায়েম কমিটির অনুষ্ঠানে যাওয়ার যৌক্তিকতা জানতে চান নুর। জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার বিষয়টি একান্ত তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। এরপর রেজা কিবরিয়া প্রবাস থেকে আসা টাকার হিসাব ও ইসরায়েলি এজেন্ট মেন্দি সাফাদির সঙ্গে নুরের বৈঠকসহ কয়েকটি বিষয় তুললে দুই নেতা ও তাঁদের অনুসারীদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়।

গতরাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া বলেন, ইসরায়েলি এজেন্ট মেন্দি সাফাদির সঙ্গে নুরের বৈঠক দেশদ্রোহিতার মধ্যে পড়ে। এ বৈঠকের কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তর-সদুত্তর দেননি। তিনি বলেন, নুর নিজের চিঠিতে নিজেকে গণ অধিকার পরিষদের প্রবাস কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করেন। বিদেশ থেকে তাঁর নামে টাকা আসে। কিন্তু দল চালাতে তিনি কোনো টাকা দেন না। এই টাকার হিসাব চাইলে বিদেশ থেকে কোনো টাকা আসে না বলে জানান নুর। এটি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

রেজা কিবরিয়া বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে তাঁর বিরুদ্ধে ইনসাফ কায়েম কমিটির অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, এটা সরকারবিরোধী প্ল্যাটফরম। সরকারবিরোধী যেকোনো দলের অনুষ্ঠানে তিনি (রেজা কিবরিয়া) বক্তব্য দেন।

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমার মনে হয় নুর সরকারের এজেন্ট। সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে। নইলে দলের নিবন্ধন পাওয়ার আগ পর্যায়ে এ ধরনের পরিস্থিতি কেন করলেন? এর পেছনে দুরভিসন্ধি আছে।’ তিনি দাবি করেন, নুর একক সিদ্ধান্তে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করতে চাইছে। এটা সফল হবে না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল হক নুরের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোনকল করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। নুরের অনুসারী, দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফের মোবাইলে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

তবে রাত সোয়া ৯টার দিকে নুরুল হক নুর তাঁর ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। তাতে তিনি বলেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে দেশি সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় মাসুদ করিম/এনায়েত করিমের বিএনপি ভাঙা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারবিরোধী অনুষ্ঠানের নামে রেজা কিবরিয়া ব্যাঙ্কক ও কাঠমাণ্ডুতে একাধিক বৈঠক করেছেন। দেশে ফিরে মনোনয়ন বিক্রি ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এসব বিষয়ে গতকাল রেজা কিবরিয়ার বাসায় জরুরি বৈঠকে ডাকা হলেও তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বরং নেতাদের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বাসার ছাদে ডাকা বৈঠক ত্যাগ করেন। এর ফলে দলীয় সিদ্ধান্ত নিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক এখনো চলছে।

ফেসবুকে নুর আরো লেখেন, ‘রেজা কিবরিয়া নিজের অপকর্ম ঢাকতে আমাকে জড়িয়ে যে অসত্য বক্তব্য ও মিথ্যাচার করছে তাতে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করছি। রেজা কিবরিয়া কতটুকু অযোগ্য সেটা তাঁর কাজকর্মে এরই মধ্যে আপনারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। গণ অধিকার পরিষদের মতো একটা সম্ভাবনাময় দলের আহ্বায়ক হয়েও তিনি দলের সভা-মিছিল ও কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না। বরং টাকার লোভে সরকারি সংস্থার ফাঁদে পড়ে তিনি বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর। আমরা সেটাতে সমর্থন না দেওয়ায় আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে গণ অধিকার পরিষদে ভাঙন ও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। নিশ্চয়ই আপনারা অবগত আছেন, এই রেজা কিবরিয়ার কারণেই গণফোরামও ভেঙেছিল।’

গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের কর্তৃত্ব ও প্রভাব তৈরি করতে গণ অধিকারে শীর্ষ দুই নেতার অনুসারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সাংগঠনিক নানা সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আগেও কয়েকবার শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল।

কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা

গণ অধিকার পরিষদ গতরাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গতকাল গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ আতাউল্লাহর সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন সদস্যসচিব নুরুল হক নুর। সভায় সাংগঠনিক আলোচনা ছাড়াও গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুশৃঙ্খলভাবে দলের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্তে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খানকে সর্বসম্মতিক্রমে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়।