ঢাকাবুধবার, ২রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বম জনগোষ্ঠী ঢুকছে দাবি দিল্লির, অপপ্রচার বলল বিজিবি

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুন ১৬, ২০২৩ ১২:২১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৩তম সম্মেলনে অন্যান্য ইস্যুর সঙ্গে আলোচনায় আসে বম পার্টির তৎপরতা। ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বম জনগোষ্ঠীর মানুষ মিজোরামে চলে যাচ্ছে। জবাবে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘটনাটি তেমন নয়। পাহাড়ি সংগঠন ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)’ কাউকে জোর করে পাঠিয়ে এমন ‘অপপ্রচার’ চালাতে পারে।

 

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ১১ জুন থেকে চার দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন হয়। এ সম্মেলন শেষে দেশে ফিরে গতকাল বৃহস্পতিবার পিলখানায় বাহিনীর সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে বম জনগোষ্ঠী ভারতের মিজোরামে চলে যাচ্ছে বলে বিএসএফ তথ্য উপস্থাপন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের কারণে ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশেরই পার্বত্য সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এ নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। উভয় দেশে তাদের আত্মীয়-পরিজন বসবাস করছে। সম্প্রতি পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেএনএ দমনে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অবস্থানের বিরুদ্ধে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান। প্রপাগান্ডার অংশ হিসেবে কিছু মানুষকে কেএনএ সন্ত্রাসীরা জোর করে মিজোরামে পাঠিয়ে থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে জাতীয়তা নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রত্যাবাসন বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বম জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে গড়ে ওঠা কেএনএর সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘাতের খবর গত কিছুদিন ধরে আসছে। এ দলটি স্থানীয়ভাবে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত। তারা নিজেদের স্বাধীন ভূখণ্ডের মাত্রচিত্রও তৈরি করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মেজর জেনারেল নাজমুল হাসান। নাথান বমের মিজোরামে অবস্থান বিষয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের (নাথান বমের মতো) পলিটিক্যাল লোকজনকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমি মনে করি মন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হওয়া উচিত। আমি তাঁর (ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা যেমন এখানে কাজ করছি; তারাও সীমান্তগুলো যেন সিল করে দেয়, যাতে সন্ত্রাসীরা এপাশ থেকে ওপাশে যেতে না পারে। নাথান বমের হস্তান্তরের ব্যাপারে কোনো আলোচনা আমাদের হয়নি।’

সীমান্ত এলাকায় তৎপর কুকি-চিন গোষ্ঠী কোথা থেকে এত আধুনিক অস্ত্র পাচ্ছে; সে বিষয়ে বিএসএফের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অস্ত্র আসছে নিশ্চিতভাবেই। তবে আমরা তো বলতে পারব না– অস্ত্র ভারত বা মিয়ানমার থেকে আসছে। অস্ত্র তো তৈরি হয় বিভিন্ন দেশে। কীভাবে আসছে, কোন দিক দিয়ে আসছে; এসব সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া বলা মুশকিল।’

সম্মেলনে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনও তার ভূখণ্ড অন্য দেশের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রয়োজনে ব্যবহারের সুযোগ দেয় না।’ সীমান্ত হত্যা বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এখন সীমান্ত হত্যা অনেক কমে এসেছে। এর পরও বিএসএফের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মোটিভেশন ও মনিটরিংয়ের অভাবে সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আরেক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়েছি।’

এ সময় মেজর জেনারেল নাজমুল জানান, সীমান্ত সম্মেলনে আমাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা পাঁচটি উন্নয়নমূলক কাজ চালুর অনুমোদন পাওয়া গেছে। এগুলো হলো– রামগড় স্কুল বিল্ডিংয়ের অসম্পন্ন কাজ, তিনবিঘা করিডোর এলাকায় ঝালংগী পকেট এবং ভিতরবাড়ি পকেট এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন, শেরপুরের ভোগাই নদীর তীর সংরক্ষণ, জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদী ও রহিমপুর খালের সংযোগস্থল পুনর্খনন এবং নেত্রকোনার ভবানীপুর সীমান্তে ১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ।