ঢাকাবুধবার, ২রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অর্থ আত্মসাৎ মামলার আসামি ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, দিনমজুর : হিলিপ প্রকল্প

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুন ৯, ২০২৩ ১১:১০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আশুগঞ্জ উপজেলার খোলাপাড়া গ্রামের ৬৫-ঊর্ধ্ব ছায়েরা বেগম। স্বামী খায়ের মিয়া গত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর। নেই গর্ভজাত সন্তান। ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন পার করছেন পালিত কন্যার সংসারে।

সায়েরা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওর অঞ্চলের অবকাঠামো ও জীবনমান উন্নয়ন (হিলিপ– দ্য হাওর ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড লাইভলিহুড ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট) প্রকল্পের দায়ের করা সাড়ে ৪ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ মামলার আসামি। একই মামলার আসামি গৃহকর্মী ফিরোজা বেগম।

সায়েরা বেগম বলেন, ‘সাত থেকে দশ দিন কাজ করেছি। আমাদের টাকা (মজুরি) দেওয়ার কথা বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে কাগজে স্বাক্ষর নেয়। পরে টাকা দেওয়া হবে বলে আমাদের বাড়িতে পাঠাইয়া দেয়।’ একই কথা বলেন ফিরোজা বেগম।

 

 

শুধু এ দু’জন নয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খোলাপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র, দিনমজুর, প্রতিবন্ধীসহ ৯ জনের নামে গত ২ মে আদালতে ৫টি মামলা করেছেন জেলা হিলিপ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো. নুরুল আমিন। মামলায় ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। আদালত মামলা আমলে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে হিলিপ প্রকল্পের আওতায় আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের হোসেনপুর থেকে জোনাকি বিল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সাবমার্সিবল সড়ক ও দেয়াল নির্মাণে ৩৯ লাখ ১১ হাজার ৮৯৩ টাকা অনুমোদন দেয় এলজিইডি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্থানীয় শ্রমিকদের সমন্বয়ে জুঁই, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, হাসনাহেনা ও বকুল নামে পাঁচটি দলে ৫০ জন শ্রমিকের এলসিএ (লেবার কনট্রাক্টিং সোসাইটি) গঠন করা হয়। এসব দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ ও কার্যাদেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

পাঁচটি দলের মধ্যে দুই কিস্তিতে ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫০ টাকা বরাদ্দ দেয় কর্তৃপক্ষ। বরাদ্দের এসব টাকা তুলে নেওয়া হয়। প্রথম কিস্তির টাকা বরাদ্দ হওয়ার পর কোনো কাজ না হলেও রহস্যজনকভাবে দ্বিতীয় কিস্তি বরাদ্দ দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে কোনো বরাদ্দেরই কাজ হয়নি।

শ্রমিকদের দাবি, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তাঁদের ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের একটি রাস্তায় সাত-আট দিন কাজ করেছিলেন তাঁরা। পরে তাঁদের মজুরি দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় খোলাপাড়া গ্রামের প্রয়াত এরফান মিয়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিমরাইল কান্দির জনৈক আমিন মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে কাগজে স্বাক্ষর নেন। তবে কোনো টাকা দেননি।

প্রতিবন্ধী ইসমাইল মিয়া বলেন, ৪০ দিনের কাজ খোলাপাড়ায় করেছেন তাঁরা, লালপুরে নয়। ৮-১০ দিন কাজ করার পর এরফান তাঁদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে কাগজে সই রাখেন। পরে টাকা দেওয়ার কথা বলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

দিনমজুর মিজান মিয়া বলেন, ‘নিজের কামের ট্যাহা পাইছি না। এখন মামলার আসামি।’

লালপুর ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোর্শেদ মাস্টার বলেন, এসব শ্রমিক প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত নন।

শরীফপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এসব শ্রমিক সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করতে পারেন না। প্রকল্পে জড়িত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাকা আত্মসাৎ করে থাকতে পারেন। সুষ্ঠু তদন্ত হলে সত্য বের হয়ে আসবে।

একটি অসাধু চক্র সরকারি এ অর্থ আত্মসাৎ করে দরিদ্র মানুষগুলোকে ফাঁসিয়েছে বলে মনে করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মো. মাহাবুবুল আলম খোকন।

হিলিপ প্রকল্পের জেলা সমন্বয়ক মো. নুরুল আমিন বলেন, সরকারি এ প্রকল্পের বরাদ্দের প্রায় ৮০ শতাংশ টাকা ব্যয় হলেও কাজ হয়নি। তবে টাকার দায়ভার কেউ নিতে চাচ্ছেন না। মামলা হয়েছে। তদন্তে সত্য বের হয়ে আসবে।

এসবের সুরাহা হওয়া দরকার বলে মনে করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, প্রথম কিস্তির কাজ না করলেও কেন দ্বিতীয় কিস্তির টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলো, তা প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মামলাগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ চলছে। গুরুত্বের সঙ্গে মামলা তদন্ত করা হবে।
এলজিইডির এক কর্মকর্তার ভাষ্য, এলসিএসের নামে টাকা ওঠালেও জনৈক আমিন কন্ট্রাক্টর টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। তবে কাগজে তাঁর নাম নেই।