ঢাকাবুধবার, ২রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দেশব্যাপী চলমান বিদ্যুৎ সংকট এবং বেড়ে চলা মূল্যস্ফীতি গ্রহণযোগ্য নয় : একনেকে প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুন ৭, ২০২৩ ১২:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দেশব্যাপী চলমান বিদ্যুৎ সংকট এবং বেড়ে চলা মূল্যস্ফীতি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সরকার স্বীকার করে– মূল্যস্ফীতির চাপ ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে মানুষ কষ্টে আছে।

বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান এবং মূল্যস্ফীতি যাতে আর না বাড়ে সে বিষয়ে কী ব্যবস্থা আছে তা খুঁজে বের করতে মন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কৌশল খাটিয়ে দ্রুততম সময়ে এ দুই সংকট মোকাবিলারও পরামর্শ দেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। একনেক চেয়ারপারসন হিসেবে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা এবং একনেকের অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

মূলস্ফীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিস্তারিত তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্যের দরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের মধ্যে এত তফাত কেন– জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন। পেঁয়াজসহ যেসব সংবেদনশীল পণ্যের দাম রাতারাতি বেড়ে যায়, সেগুলোর মজুত বাড়াতে হবে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবিকে শক্তিশালী করতে হবে। টিসিবি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আপৎকালীন মজুত এবং প্রয়োজনীয় সময়ে বাজারে সরবরাহের মাধ্যমে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার সরকারি প্রতিষ্ঠান। নিত্যপণ্যের সংরক্ষণ সক্ষমতা বাড়াতে রাজধানী এবং এর বাইরে সংরক্ষণাগার নির্মাণ ও বাজারে ভারসাম্য আনতে নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে আবাদযোগ্য জমি যেন অনাবাদী না থাকে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, রিজার্ভের চাপ রয়েছে এ মুহূর্তে। ডলারের সরবরাহ বাড়াতে বিদেশি ঋণের সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অন্তত নিজেদের গাফিলতির কারণে যাতে বিদেশি ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে না যায়।

কৃচ্ছ্রের অংশ হিসেবে গাড়ির ব্যবহার এবং অফিসের আকার যাতে সাশ্রয়ী হয়, সে বিষয়েও নির্দেশনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এসব বিষয়ে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ব্রিফিংয়ে এম এ মান্নান বলেন, বিদ্যুতের সংকট নিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ একনেকের কাছে দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছেন। তবে মূল্যস্ফীতি দুই সপ্তাহের মধ্যে কমানো সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূল্যস্ফীতি অন্তত আর যেন না বাড়ে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, টাকার বিনিময়ে ডলারের দর বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমলেও ডলারের দাম এখনও বেশি থাকায় দেশের বাজারে সুফল পাওয়া যায় না। ডলারের দাম আগামীতে আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাহলে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে থাকবে কিনা– জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাজারে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন,  বাণিজ্যমন্ত্রী ১৫ দিন আগে বলেছিলেন, পেঁয়াজের দাম না কমলে আমদানি করা হবে। গত ১৫ দিন দামও কমেনি, আমদানিও করা হয়নি। এখন আমদানির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের দর কমলো। এ রকম সর্বক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজাটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ধরা হয়েছে, যা প্রশ্নবিদ্ধ।

রেকর্ড ১৮ প্রকল্প অনুমোদন
সাধারণত ১০ থেকে ১২ প্রকল্প অনুমোদন হয়ে থাকে প্রতিটি একনেকে। গতকালের একনেকে রেকর্ড ১৮টি প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ১১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৭ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা; বিদেশি ঋণ ৩ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। বাকিটা বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর নিজস্ব। এ পরিমাণ ৮১ কোটি টাকার মতো।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে– ফরিদপুরের মধুমতী নদীর বাম তীরের ভাঙন থেকে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর সংযোগ সড়কসহ অন্যান্য এলাকা সংরক্ষণ ও ড্রেজিং, বাগেরহাটের পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, নেত্রকোনায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় পর্যায়) (১ম সংশোধন), নড়াইলের পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন, ৬টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থানভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষণাগার উন্নয়ন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আশ্রয়ণ-২ (৫ম সংশোধন) অনুমোদন, ১০টি মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আধুনিক সুবিধা সংবলিত ১৯টি হোস্টেল ভবন নির্মাণ এবং পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন (১ম সংশোধন) প্রকল্প।

এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টি বিল্ডিং স্থাপন, হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন, জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমি প্রতিষ্ঠা (৩য় সংশোধন), বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১ শেওলা, রামগড় ও ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি রিং রোড নির্মাণ, চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড (৪র্থ সংশোধন) প্রকল্প, সাভার সেনানিবাস এলাকায় মিট প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপন, ডিজিএফআইর টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ এবং কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন (টিআইএইচডিটিসিবি) (২য় সংশোধন), রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ (২য় সংশোধন) প্রকল্প।