ঢাকামঙ্গলবার, ১লা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সরকার যতই কঠোর হোক না কেন মাঠ ছাড়বে না বিএনপি

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মে ২৪, ২০২৩ ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। তাই বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে কাজ শুরু করেছে তারা, এমন ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে বিএনপি নেতাদের মনে। তাঁদের ধারণা, আগামী নির্বাচনে বিএনপি যাতে পূর্ণ শক্তিতে অংশ নিতে না পারে, সে জন্য নানা চেষ্টা চলছে। এর অংশ হিসেবে রাজশাহীর সামান্য ঘটনাকে বড় করে তুলে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালানো হচ্ছে। মামলা হচ্ছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার চলছে। বাড়িঘরে হামলা করা হচ্ছে। 

তবে তাঁরা জানিয়েছেন, সরকার যতই কঠোর হোক না কেন এবার আর কোনো অবস্থাতেই বিএনপি মাঠ ছাড়বে না। দুই পক্ষই যে কেউ কাউকে ছাড় না দেওয়ার অবস্থানে চলে যাচ্ছে গতকাল মঙ্গলবারও তা বোঝা গেছে মাঠের কর্মসূচিতে। পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হন পুলিশসহ বেশ কিছু নেতা-কর্মী। এ সময় একটি বিআরটিসির দোতলা বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগও করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য বিএনপি ও পুলিশ পরস্পরকে দায়ী করেছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে করা বিএনপির চলমান আন্দোলন দমনে সরকারের সব যন্ত্রকে ব্যবহারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে রাজশাহীর বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদের বক্তব্য নিয়ে যা করা হচ্ছে, তাতে খুবই স্পষ্ট, সরকার বিএনপিকে কোণঠাসা করতে চাচ্ছে।

এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও সরকারের তৎপরতা মোকাবিলায় পাল্টা কৌশলের খোঁজে রয়েছেন বিএনপি নেতারা। কোনো অবস্থাতেই মাঠ না ছাড়ার কথা বলছেন দলটির নেতারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে পূর্ণ শক্তির আওয়ামী লীগকে মোকাবিলায় এর বিকল্প নেই বলে তাঁরা মনে করেন।

রাজধানীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, বিএনপি আন্দোলনে থাকবে। হাজার গুলি করুক, হাজার গ্রেপ্তার করুক, বিএনপি পিছপা হবে না।

দলটির নেতারা জানিয়েছেন, চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে নেতা-কর্মীদের চাঙা করা হচ্ছে।

তবে সরকার কখন কী পদক্ষেপ নেয়, তা দেখে বিএনপি প্রতিক্রিয়া দেখাবে বলে জানান দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘সরকার যেমন কৌশল নেবে, তার জবাবে আমরাও পাল্টা কৌশল নেব। তবে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই।’ একটি দলের ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা—এমন দাবি করে তিনি বলেন, ‘আর কত মামলা দেবে?’

ঢাকায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পদযাত্রাটি সায়েন্স ল্যাবের সামনে আসার পর দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে, বিএনপির নেতা-কর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় বিআরটিসির একটি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ধানমন্ডি থানা বিএনপির নেতা শেখ রবিউল ইসলাম রবিসহ অন্তত ১৫ জনকে আটক করা হয়।

সংঘর্ষের জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের দায়ী করে রমনা বিভাগের উপকমিশনার আশরাফ হোসেন বলেন, ‘সংঘর্ষে বেশ কিছু পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি তারা না ঘটালেও পারত। এখন আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলেন, দেশের মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত রেখে তাদের ভয়াবহ দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে লাগাতার জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছে। ধারাবাহিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

ঢাকার বাইরে
কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি মহানগরেও পদযাত্রা করে বিএনপি। এসব পদযাত্রা ঘিরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া না গেলেও রাজশাহীতে নিষেধাজ্ঞার কারণে পদযাত্রা করতে পারেননি বিএনপির নেতা-কর্মীরা। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের আপত্তিকর বক্তব্যের জেরে মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। গতকাল সকালে কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে রাজশাহীতে যেকোনো ধরনের ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মহানগর পুলিশ (আরএমপি)।

নারায়ণগঞ্জে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘিরে দফায়-দফায় মারামারির ঘটনা ঘটিয়েছেন যুবদলের কর্মীরা। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সামনেই তাঁরা এ ঘটনা ঘটান। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকায় পদযাত্রা কর্মসূচিপূর্বক পথসভায় ব্যানারের সামনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে মারামারি হয়।