ঢাকাসোমবার, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আওয়ামী লীগই অগ্নিসন্ত্রাসের ‘জন্মদাতা’, আমরা কখনোই অগ্নিসন্ত্রাস করিনি : ফখরুল

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
এপ্রিল ১৯, ২০২৩ ১০:৩৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগই অগ্নিসন্ত্রাসের হোতা, জন্মদাতা। আজ বুধবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল পাল্টা এই অভিযোগ করেন।

‘বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে’, ওবায়দুল কাদেরের এমন অভিযোগের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কখনোই অগ্নিসন্ত্রাস করিনি। এই সন্ত্রাস তো তাদের (আওয়ামী লীগ) জিনের মধ্যে, জিনে আছে। আমি বারবার একটা কথা বলি যে তাদের দুটো ব্যাপার—একটা সন্ত্রাস, আরেকটা দুর্নীতি। এটা ওদের বডি কেমিস্ট্রিতে আছে। এখান থেকে তারা বেরোতে পারে না।’

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় পরপর কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপির নেতারা একে–অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন।

রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের আগুন লাগার ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছেই না। ফায়ার ব্রিগেডও বলেছে, এটা শর্টসার্কিটে হতে পারে। সবগুলোতে খেয়াল করে দেখবেন এখানে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত—তারা কথা বলার আগেই প্রধানমন্ত্রী বলে দিলেন, এটাতে বিএনপি জড়িত আছে কি না দেখতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন উনারা (আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক) বলছেন, অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি। আরে অগ্নিসন্ত্রাসের মূল হোতা আওয়ামী লীগ।’

ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতা পায়, তখন তারা সবকিছু লুটে নেয়। এরা হচ্ছে সর্বগ্রাসী, দুর্নীতিপরায়ণ, লুটেরা। বর্গিরা যেমন আসে লুট করে নিয়ে চলে যায়, তেমন ওরা ক্ষমতায় এসে লুট করে নিয়ে চলে যায়…এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগ।’

বিদেশিদের কাছে আমরা যাই না

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশিদের কাছে আমরা যাই না। তারা আমাদের আমন্ত্রণ করেছে বলে আমি গিয়েছি। যতবার আমরা গেছি, তাদের আমন্ত্রণে গেছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের চাইতে এক শত ভাগ বেশি তারা (আওয়ামী লীগ) গেছে, এখনো যাচ্ছে। সেই দিনও ওবায়দুল কাদের সাহেব তাদের টিম নিয়ে আমেরিকান অ্যাম্বাসেডরের কাছে গিয়েছেন। তাহলে সেটা কী? ধরনা কে দিচ্ছে? কোটি কোটি মিলিয়ন ডলারে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে…সব খানে গিয়ে তারা বলছে যে ভাই, এবারকার নির্বাচনটা আমাদের করতে দাও, এভাবে করতে দাও, যাতে আমাদের প্রতিপক্ষ কেউ না থাকে, যাতে করে আমরা আগের মতোই ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করতে পারি।

আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্য ‘একেবারেই অবান্তর’ বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের একটাই কথা…জনগণ তাদের আর দেখতে চায় না ক্ষমতায়। তাদের উচিত হবে পদত্যাগ করা, সংসদ বিলুপ্ত করা এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নতুন নির্বাচন কমিশন করে নির্বাচন করা। এটাই হচ্ছে একমাত্র পথ।’

১২ বছর পর আলামত জব্দ নিয়ে প্রশ্ন

২০০২ সালে সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার আদালতের দেওয়া রায় নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিএনপির নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘এই অবৈধ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনের পূর্বেই বিএনপিকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে আছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাদের আটকে রাখা। যেমন তিনবারের সংসদ সদস্য, জনপ্রিয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটকে রাখার একটা প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছে।

২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনার ১২ বছর পর জব্দতালিকা প্রণয়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঘটনার ১২ বছর পরে জব্দতালিকা তৈরি করা হয়েছে। মহাসড়কের ওপর থেকে বুলেটের খোসা, একটা কালো রঙের মুজিব কোট, দুটি স্যান্ডেল ইত্যাদি উদ্ধার করে আলামত দেখানো হয়। এক যুগ পরে? ওই সময়ের মধ্যে ওই মহাসড়ক সংস্কারও হয়েছে কয়েকবার।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরপর উনারা আলামত কীভাবে পেলেন, কীভাবে এটা সত্যতার প্রমাণ করছেন—এটা কারও কাছে বোধগম্য নয়।’

ফখরুল বলেন, ‘হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে সাজা প্রদান সরকারের নীলনকশার অংশ। এটা শুধু হাবিব সাহেব নয়, দেখবেন খুব দ্রুত বিএনপি ও বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অনেককেই এ ধরনের মিথ্যা মামলা এগিয়ে নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আমরা লক্ষ করছি যে মামলাগুলো খুব দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এসব করে যদি তারা মনে করে থাকেন যে জনগণের আন্দোলনকে নস্যাৎ করবেন, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বঙ্গবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার জন্য সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করে এসব অগ্নিকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন ও সদস্যসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।