ঢাকাসোমবার, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কওমি মাদরাসা থেকে জঙ্গিদের উত্থান হয়নি, এখানে দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া হয় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
এপ্রিল ১৪, ২০২৩ ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জঙ্গিবাদের উত্থানের সময় সবাই মনে করত কওমি মাদরাসা থেকেই জঙ্গিরা আসে। আমরা তখন বলেছিলাম কওমি মাদরাসায় দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া হয়। ইসলাম শেখানো হয়। এখান থেকে কখনো জঙ্গি উত্থান হয়নি, হতে পারে না। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম।

বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় দারুল উলুল মুইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় এক আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মাদরাসায় এসে তিনি প্রথমে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির কবর জিয়ারত করেন।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘ইসলাম কোনোদিন মানুষ কতল করার ধর্ম নয়। রক্তপাত করার হুকুম ইসলাম শেখায় না। সেজন্য আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারি যে আমরা জঙ্গি দমন করেছি এবং আমাদের আলেম-ওলামারা এবং মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনরা আমাদের জঙ্গি দমনে সহযোগিতা করেছেন। কারাবন্দী হেফাজত নেতাদের মুক্তির জন্য যে তালিকা হেফাজত নেতারা দিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই মুক্তি পেয়েছে। বাকিরাও ক্রমান্বয়ে মুক্তি পাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যতদিন সরকার পরিচালিত হবে ততদিন এদেশের কোনো কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের একমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নুরানী মাদরাসা বন্ধ হবে না। এদেশে যতদিন আযানের ধ্বনি শুনা যাবে কানে ততদিন এদেশ শান্তিতে থাকবে। কওমি মাদরাসার সাথে সরকারের কোনো বিরোধ নেই। কওমি অন্তুরর্ভুক্ত বেফাক ও হায়াতুল উলইয়া বোর্ডের কোনো সিদ্ধান্তে সরকার হস্তক্ষেপ করেনি, করবেও না। সরকার পক্ষ থেকে শুধু বলা হয় কি কি কিতাব পড়ানো হয় সেগুলো জানাতে। কেননা দেশে-বিদেশে অনেক স্থানে সরকারকে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে তুলে ধরতে হয়।’

‘কওমি মাদরাসার অনেক ছাত্ররা যেভাবে জ্ঞান অর্জন করছে আমরা দেখেছি তারা সব জায়গায় পারদর্শী’ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যখন জঙ্গি নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় ছিল তখন সবাই বলেছে কওমি মাদরাসাগুলো থেকে জঙ্গি সৃষ্টি হয়। তখন আমরা বলেছিলাম, কওমি মাদরাসা শুধু ইসলাম ও দ্বীনি শিক্ষা দেয়। এখানে কোনোদিন জঙ্গির উৎপাত হতে পারে না।’

আলোচনাসভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোনো নির্বাচনী সফর নয়। আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাতে যাচ্ছি। আমার অনেক দিন ধরে ইচ্ছা ছিল হেফাজতের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির কবর জিয়ারত করব। সে উদ্দেশ্যেই আমি হাটহাজারী মাদরাসায় এসেছি।’

হেফাজতের সাথে সরকারের বর্তমান সম্পর্ক কেমন এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কারো সাথে বৈরী সম্পর্ক নেই। সবার সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে। হেফাজতের যে কার্যকলাপ তারা মূলত ইসলামের শর্তে ইসলাম প্রচারের জন্যই কাজ করে যাচ্ছে।’

হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার সভাপতিত্বে এবং মাদরাসার সহকারী পরিচালক মুফতি মো. জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক মন্ত্রী ও হাটহাজারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন নদভী, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, ডিআইজি এসবি মো. নাফিউল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহসহ, জেলা ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  আবু তৈয়ুব মো. আরিফ হোসেন, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম, হাটহাজারী মডেল থানার ওসি রূহুল আমিন সবুজ,  হাটহাজারী মাদরাসার মুফতি কেফায়েত উল্লাহ প্রমুখ। সভায় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথমে এসে হাটহাজারী মাদরাসা মসজিদে আছরের নামাজ আদায় করেন। পরে হেফাজতের আমীর মরহুল আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর কবর জিয়ারত করেন। আলোচনাসভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাটহাজারী মাদরাসায় ইফতার করেন।