ঢাকাসোমবার, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নারী মাদক গ্রহণকারী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে দেশে

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
এপ্রিল ১৩, ২০২৩ ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারী মাদক গ্রহণকারীর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। নারীদের মাদক গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা সমাজে একসময় ভয়ংকর রূপ নেবে।

গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীর ঢাকা আহছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র আয়োজিত এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজল এ কথা বলেন। কেন্দ্রের নারী মাদকাসক্তি চিকিত্সায় সফলতার সঙ্গে ৯ বছর পেরিয়ে দশম বছরে পদার্পণ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটির সভাকক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, সামাজিক স্টিগমার (অপবাদ) কারণে নারী মাদকনির্ভশীলরা চিকিৎসা গ্রহণে অনাগ্রহী। তাই বিষয়টি তেমন প্রকাশ পায় না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ। তিনি বলেন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিত্সা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬৪৭ জন নারীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২৯ জন রোগী ফের চিকিৎসা নেন। চিকিৎসাসেবা নেওয়া নারীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ ইয়াবা গ্রহণকারী, ২৮ শতাংশ গাঁজা, ১৬ শতাংশ ঘুমের ওষুধ, ১৫ শতাংশ একই সঙ্গে বিভিন্ন মাদক গ্রহণকারী, ২ শতাংশ মদ, ২ শতাংশ শিরায় মাদক গ্রহণকারী, বাকিরা অন্যান্য মাদক গ্রহণকরী। মানসিক রোগীদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ সিজোফ্রিনিয়া, ৩০ শতাংশ মুড ডিজ-অর্ডার, ১২ শতাংশ বাইপোলার, ১০ শতাংশ ডিপ্রেশন, ৬ শতাংশ ওসিডি, বাকিরা অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল।

এই কেন্দ্রে শুধু নারীদের মাধ্যমেই নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা দেওয়া হয় জানিয়ে মাসুদ বলেন, মাদকনির্ভরশীলতা একটি অসুস্থতা বিধায় মাদকমুক্তরা আবার মাদক গ্রহণ করতে পারে; তাই তাদের আবার চিকিৎসা নিতে উদ্যোগী হতে হবে। সে ক্ষেত্রে সমাজের সব পর্যায় থেকে সচেতনতার কাজ করতে হবে।

মাদক গ্রহণের কারণ হিসেবে তাঁরা জানতে পেরেছেন, নারীরা কৌতূহল, মাদক গ্রহণকারী বন্ধুদের চাপ, একাকিত্ব, পরিবারের অন্য সদস্য বা ছেলেবন্ধু মাদক গ্রহণে অভ্যস্ত থাকলে, বিষণ্নতা, হতাশা, অতিরিক্ত রাগ-জেদ ইত্যাদি কারণে মাদক ব্যবহার করে থাকে।

তিনি বলেন, ‘পারিবারিক ও সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে নারী মাদকনির্ভরশীলদের বিষয়টি আমাদের দেশে এখনো প্রায়ই প্রকাশ্যে আসে না। ফলে সমস্যাটির সমাধান সহজ হয় না। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় ঢাকা আহছানিয়া মিশন নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসায় কাজ করছে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আক্তারুজ্জামান সেলিম, স্বাস্থ্য সেক্টরের সহকারী পরিচালক (মেডিক্যাল সার্ভিসেস) ডা. নায়লা পারভীন, সিনিয়র সাইকোলজিস্ট রাখী গাঙ্গুলী।

আরো উপস্থিত ছিল ঢাকা আহছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের সহকারী পরিচালক মোখলেছুর রহমানসহ স্বাস্থ্য সেক্টরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, মাদকাসক্ত থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি এবং চিকিৎসাধীনদের পরিবার।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকা আহছানিয়া মিশন থেকে চিকিৎসা নেওয়া ৬৪৭ জন রোগীর মধ্যে ৬৫ শতাংশ চিকিৎসার মেয়াদ পূর্ণ করেছে। মেয়াদ পূর্ণ করা রোগীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ মাদকমুক্ত সুস্থ জীবন যাপন করছে এবং কেন্দ্রের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছে। মেয়াদ পূর্ণ না করে চলে গেছে ২৪ শতাংশ এবং ১৭ শতাংশ রিল্যাপ্স (আবার মাদক গ্রহণ) করেছে, .৯ শতাংশ মৃত্যুবরণ করেছে। বিভিন্ন কারণে ৪ শতাংশ রোগীকে রেফার করা হয়েছে। ৬৪৭ জনের মধ্যে ৫১ শতাংশ কেন্দ্রের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেনি এবং ৪ শতাংশ কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। যাঁরা কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই তাদের অনেকে সুস্থ আছে, বিদেশ গেছে এবং বাকিরা লোকলজ্জা ও সামাজিক স্টিগমার কারণে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। এ ছাড়া ৬৪৭ জন রোগীর মধ্যে শুধু মানসিক সমস্যার কারণে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৩৩ জন নারী।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে আহছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি মাদকাসক্তিজনিত সমস্যা, মানসিক সমস্যা ও আচরণিক সমস্যাগ্রস্ত নারীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছে।