ঢাকাসোমবার, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সোনার বাংলা ট্রেনে সরবরাহকৃত ইফতারে তেলাপোকা

তানভীর মাসুদ | সিটিজি পোস্ট
এপ্রিল ১০, ২০২৩ ৩:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী “সোনার বাংলা ট্রেনে” সরবরাহকৃত ইফতারের প্যাকেটে তোলাপোকা পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে । এই ঘটনার ভুক্তভোগী মোঃ শাহনুর নামে সংক্ষুব্ধ এক যাত্রী মহা পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

 

উক্ত লিখিত অভিযোগে ট্রেন যাত্রী শাহনুর জানান, “সোনার বাংলা ট্রেনে ” গত ৯ই এপ্রিল ভ্রমণ করার সময় (আমার আসন-৫৩) ইফতারের প্যাকেট ক্রয় করি ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে। প্যাকেট খুলে ইফতার করার সময় চনাবুট মুড়ির সাথে তেলাপোকা  দেখতে পায়। সাথে সাথে ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিসে অভিযোগ করে কোন সদুত্তর পান নি তিনি।

 

শাহনুর বলেন, ‘ ইফতারের প্যাকেট কিনে তা খোলার পরই ছোলার সাথে তোলাপোকা দেখতে পাই। এরআগে আমি খাওয়া শুরু করি। ফলে বমি করতে করতে ট্রেনেই অসুস্থ হয়ে যাই৷ ‘

 

অনুসন্ধানের জানা যায়,  সোনার বাংলা ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিস ঠিকাদারী করছেন “হাবিব বানিজ্য বিতান” নামের একটি নামসর্বস্ব  প্রতিষ্ঠান। টেন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পরও প্রতিষ্ঠানটির মালিক থেকে অবৈধ ভাবে বিপুল অর্থের বিনিময়ে বারবার ক্যাটারিং সার্ভিসের টেন্ডার নবায়ন করে দেয় রেলওয়ে পুর্বাঞ্জলের কিছু আসাধু কমকর্তা।

 

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং রেলওয়ের আসাধু কমকর্তাদের মাধ্যম হয়ে কাজ করে শাহআলম ও ওয়ালিউর রহমান নামের এক ঠিকাদার। এ-ই সিন্ডিকেটের দেয়া খাবারের মান যেমন নিম্নমানের তেমনি খাবারের দাম আকাশ্চুম্বি। অধিকাংশ খাবার ই থাকে বাসি, অনেক সময় দেখা গেছে অনেক যাত্রী এ-ই বাসি খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

 

সোনার বাংলা ট্রেনে নিয়মিত ভ্রমণ করা এক যাত্রী বলেন,

” এই ট্রেনে অ্যাটেনডেনটদের ব্যবহার দৃষ্টিকটু, শুধু তাই নয় যে খাবার সরবরাহ করা হয় তা অত্যন্ত নিম্নমানের এবং দামও অনেক বেশি । সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ সমস্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত”।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, আমরা বছরের পর বছর ঘুরেও একটি টেন্ডার পায় না। কিন্তু এ-ই সিন্ডিকেট টি প্রতিবারিই টেন্ডার গুলো নবায়ন করে নিয়ে যাচ্ছে যা রেল আইন অনুযায়ী সম্পুর্ন বেআইনী।

বছরের পর বছর একটি টেন্ডার ও না পাওয়াই আমার মতো আরও অনেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, আবার অনেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।

 

এ-ই বিযয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সি সি এম বিভাগের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের মোবাইল নাম্বারে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায় ।

 

তবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ” সোনার বাংলা ট্রেনে সরবরাহকৃত ইফতারে তেলাপোকা পাওয়ার ঘটনাটি আমি জেনেছি এবং এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেছি” ।

 

উল্লেখ্য, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী সোনার বাংলা ট্রেনের নিয়মিত যাত্রীরা প্রায় অভিযোগ করে থাকেন, উক্ত ট্রেনের অ্যাটেনডেন্টদের দুর্ব্যবহারে পাশাপাশি নিম্নমানের বাসী খাবার সরবরাহ করা হয় এবং মানের তুলনায় সরবরাহকৃত খাবারের উচ্চ মূল্যের।

 

বাংলাদেশ রেলওয়ে কে আধুনিক ও গতিশীল করতে সরকার যেখানে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে , সেখানে এই ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা ট্রেন যাত্রীদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রেনে খাবার সরবরাহের জন্য গৃহীত টেন্ডার স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করে যোগ্য ও মানসম্মত প্রতিষ্ঠানকে খাদ্য সরবরাহের কাজ দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার সরবরাহ করে যাত্রী সেবা সুনিশ্চিত করা উচিত ।