ঢাকাসোমবার, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মৃত ছেলের শুক্রাণু দিয়ে সন্তানের জন্ম

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
এপ্রিল ৮, ২০২৩ ১১:০৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজের মৃত ছেলের শেষ ইচ্ছাপূরণে তাঁর শুক্রাণু ব্যবহার করে সারোগেসির মাধ্যমে (অন্য নারীর গর্ভ ভাড়া নিয়ে সন্তান জন্মদানের পদ্ধতি) সন্তানের দাদী হয়েছেন স্পেনের অভিনেত্রী আনা ওবরেগন (৬৮)। এই ঘটনার পর সারোগেসি নিয়ে স্পেনে চলছে তুমুল বিতর্ক।

বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএন। এতে বলা হয়, এপ্রিলের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের হোলা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত আনা ওবরেগনের এক সাক্ষাৎকারে পুরো বিষয়টি উঠে আসে।

সেখানে কীভাবে অ্যালেসের শুক্রাণু ব্যবহার করে সারোগেসি পদ্ধতিতে মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়েছে তা উঠে এসেছে। সেখানে তিনি বলেন, ২০২০ সালে ২৭ বছর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাঁর ছেলে অ্যালেস। ছেলের জীবনের শেষ ইচ্ছা ছিল সন্তানের বাবা হওয়া।

আনা ওবরেগন হোলা ম্যাগাজিনকে আরও বলেন, ‘এই মেয়েটি আমার মেয়ে নয়, আমার নাতনি। সে অ্যালেসের মেয়ে এবং সে যখন বড় হবে তখন আমি তাকে বলব যে তার বাবা একজন নায়ক ছিলেন।’

স্প্যানিশ অভিনেত্রী আনা ওবরেগন তাঁর নাতনির নাম রেখেছেন আনা সান্দ্রা লেকুইও ওবরেগনের। গণমাধ্যমের সামনে তিনি বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলার পর ‘লেকটারাস’ নামে এক সাময়িকী আনা সান্দ্রার গর্ভধারিনী (সারোগেট) মায়ের ছবি নিয়ে প্রচ্ছদ প্রকাশ করেছে। ওবরেগন ছেলের সন্তান জন্ম দিতে ওই নারীর গর্ভই ভাড়া নেন।

গত ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে আনা স্যান্দ্রা লেকুইও ওবরেগনের জন্ম হয়। সে হিসেবে জন্মসূত্রে সে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী নাগরিক হবে। স্পেনে যাওয়ার আগে মিয়ামিতে স্পেনের কনস্যুলেটের মাধ্যমে তাঁকে নথিভুক্ত করা হবে বলে হোলা ম্যাগাজিনকে জানান আনা ওবরেগন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্পেনে সারোগেসি অবৈধ হলেও বিকল্প উপায়ে সন্তান জন্মদানে সহায়তা নেওয়া যায়। সেখানে সন্তান জন্মদানে মৃত পুরুষের শুক্রাণু ব্যবহার নিয়মিতই হয়ে থাকে। তবে সেক্ষেত্রে মৃত্যুর ১২ মাসের মধ্যে শুক্রাণু ব্যবহার করতে হয় এবং জন্মদানে শুধু বিধবা নারী যুক্ত থাকতে পারেন।

সারোগেসি পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া আনা সান্দ্রাকে স্পেনে আনা যাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। কারণ, স্পেনের আইন অনুযায়ী রক্তসম্পর্কিত কাউকে দত্তক নেওয়া যায় না। তাই দাদি হয়ে তিনি সান্দ্রাকে দত্তক নিতে পারবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।

তবে এই অভিনেত্রী বলছেন, জৈবিক দিক থেকে তিনি সান্দ্রার দাদী হলেও আইনগতভাবে তিনি তার মা। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী সব নথি তা কাছে আছে। আর স্পেনে সারোগেসি অবৈধ হলেও সারোগেসির মাধ্যমে অন্য দেশে জন্ম নেওয়া শিশু দত্তক নেওয়া বৈধ।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, বিষয়টি আইনগত অস্পষ্টতা আছে। তাই, দেশে ফেরার পর ওবরেগনের কোনো আইনি সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

তবে সবকিছুর শেষে নৈতিকতার প্রশ্নটিই বারবার আলোচনায় আনছেন সমালোচকেরা। কারণ, স্পেনে সারোগেসিকে ‘নারীর ‍ওপর নিপীড়ন’ হিসেবে দেখা হয়।

এ বিষয়ে দর্শনের শিক্ষক গঞ্জালো ভেলাস্কো এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মৃত ছেলের শুক্রাণু ব্যবহার করে সারোগেসি পদ্ধতির মাধ্যমে মা হওয়ার বিষয়টি আমার কাছে খুবই প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে হচ্ছে।’

তবে এই বিতর্ককে ‘অযৌক্তিক’ উল্লেখ করে আনা ওবরেগন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান জন্মদান খুবই স্বাভাবিক। সেখানে স্পেনের মতো এমন বিতর্ক নেই। বিশ্বের অনেক দেশেই এই পদ্ধতি বৈধ।’