শনিবার (১ এপ্রিল) চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনার ১৯ বছর হলো। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়া ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান আটক করা হয়। ওই ঘটনার পর তৎকালীন সরকার এ অস্ত্র চালানের দায় জঙ্গিগোষ্ঠীদের ওপর চাপালেও ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে এর সঙ্গে তৎকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি।
সাক্ষাৎকারে গগনজিৎ সিং জানান, কোনো সন্দেহ নেই তখন বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। তারা ক্ষমতায় থাকাকালে উগ্রবাদী ও জঙ্গিদের জন্য নিরাপদ এক আশ্রয়স্থল হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পরেশ বড়ুয়া এমন এক স্থানে বসবাস করতেন, যেখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বাহিনী ছিল। দোতলা বাসায় তিনি থাকতেন এবং সেখান থেকে বাধাহীনভাবে সর্বত্র চলাফেরা করতে পারতেন। তিনি তার ছেলেদের নিয়ে ওখানকার পার্কে ফুটবল খেলতে যেতেন। এ ছাড়া অন্যান্য উগ্রবাদী নেতা ও তাদের পরিবারও সেখানে থাকত। তারা সেখানে শান্তিতে থাকতে পেরেছে, কেননা ওই দেশের (বাংলাদেশ) সরকারের সমর্থন তারা পেয়েছিল।
পাকিস্তান ১৯৭১ সালে পরাজয়ের কথা ভুলতে পারেনি মন্তব্য করে গগনজিৎ সিং বলেন, পাকিস্তান সর্বদা চেষ্টা করেছে বাংলাদেশকে দুর্বল করতে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। আর পাকিস্তানও তাদের সমর্থন করে। এরপর যখন আওয়ামী লীগ এলো (সরকার গঠন করল), তারা বাংলাদেশের মুক্তির বিষয়টি জানে। কিন্তু পাকিস্তান সর্বদা প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে। আর বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে তাদের (পাকিস্তানের) বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ রয়েছে।
উগ্রবাদীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার জন্যই এত বড় অস্ত্রের চালান এসেছিল জানিয়ে ভারতের সাবেক এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এই অস্ত্র জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ত উগ্রবাদী এবং অন্যদের জন্য ছিল। এ ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকেও এই অস্ত্র প্রদান করা হতো। এতে করে বাংলাদেশ ও ভারতের এ পুরো অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে উঠত এবং এটাই তারা চেয়েছিল।
তিনি বলেন, আসলে এর (অস্ত্র চালান) মূল পরিকল্পনাকারী ছিল পাকিস্তান। যদি তারা (বিএনপি-জামায়াত) এখনো ক্ষমতায় থাকত, তাহলে সেটি বাংলাদেশের জন্য সমস্যা হতো। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দেশটিতে এ ধরনের জঙ্গিবাদ নেই। হ্যাঁ, ভারতের সেভেন-সিস্টারসে (ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য) এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। সেটাও হয়তো থাকত না। আওয়ামী লীগ সব বিচ্ছিন্নতাবাদীকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে। এগুলো অবশ্যই হতো না। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রভাবটি পড়ত বাংলাদেশে। বর্তমানে যেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আপনারা বসবাস করছেন, এটি সম্ভব হতো না।
বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের অবস্থান বিষয়ে উল্লেখ করে গগনজিৎ বলেন, যখন একটি দেশে র্যাডিকালরা ক্ষমতায় আসে এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখন সব বিচ্ছিন্নতাবাদীগোষ্ঠী একত্র হওয়া শুরু করে। তারা প্রত্যেকে পরস্পর থেকে সুবিধা গ্রহণ করতে চায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারেক রহমানের সঙ্গে দাউদ ইব্রাহিমের সম্পর্ক ছিল কি না আমি বলতে পারি না। কিন্তু এ অঞ্চলের যতগুলো উগ্রবাদীগোষ্ঠী রয়েছে, তারা প্রত্যেকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একত্র হচ্ছিল। ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান বিএনপি নেতা ও যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মালিকানায় থাকা জাহাজে করে এসেছিল- এ বিষয়টি স্মরণ করে তিনি বলেন, তাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রশ্রয়েই তারা এটি করেছিল।
পূর্ববর্তী এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য বরাবরই দায়ী ছিল পাকিস্তান। ২১ আগস্ট (২০০৪) গ্রেনেড হামলাসহ আমাদের কাছে থাকা প্রতিবেদন অনুসারে এমন অসংখ্য কার্যক্রমের বিষয়ে আমরা জানি। অন্যদিকে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’নীতির কারণে এখন দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বিরাজ করছে।