ঢাকারবিবার, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু জেসমিনের, মাথায় আঘাতের চিহ্ন : চিকিৎসক

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ২৭, ২০২৩ ১০:৪৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

র‍্যাব হেফাজতে নওগাঁ ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের (৪৫) মৃত্যু ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। পরিবারের পক্ষ থেকে নির্যাতনের অভিযোগ করা হচ্ছে। তবে র‍্যাব বলছে, আটকের পরপরই ওই নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ মার্চ মারা যান সুলতানা জেসমিন। হাসপাতালের প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, সুলতানা জেসমিন মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহম্মদ বলেন, ‘জেসমিনকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁর মাথার ডানপাশে একটু আঘাতের চিহ্ন ছিল। র‍্যাব বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় পড়ে গিয়ে জেসমিন আঘাত পেয়েছেন।’

রামেক হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, ‘প্রথমে জেসমিনকে হাসপাতালের নিউরোসার্জারির ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পাঠানো হয়। এর আগে তাঁর মাথার সিটিস্ক্যানও করানো হয়। এতে তাঁর মাথায় “ইন্ট্রাক্র্যানিয়েল হেমারেজ” (অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ) ধরা পড়ে। পরে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণেই তাঁর মৃত্যু হয়।’

জেসমিনের পরিবার অভিযোগ করছে, আটকের পর নির্যাতনে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে। শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন ছিল কি না জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘সেটা তো আমরা দেখিনি। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকেরা বলতে পারবেন। তবে তাঁর উচ্চ ডায়াবেটিস পাওয়া গিয়েছিল। পড়ে গেলে যে ধরনের আঘাত হয়, সে রকমই একটা আঘাত ছিল।’

এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের তিনজন চিকিৎসকের একটি বোর্ড ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। আজ সোমবার হাইকোর্ট জেসমিনের সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন তলব করেছেন। আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যেই প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।

তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের প্রধান ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন।

রাজপাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক রুহুল আমিন বলেছেন, হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তিনি বলেন, ‘ফরেনসিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছিলেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি ওই প্রতিবেদন পুলিশকে দেননি। সেটা চিকিৎসকদেরই দিয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে জানি না। কোনো কাগজপত্রও পাইনি। হাইকোর্ট যদি এ রকম আদেশ দেন তাহলে সিনিয়র স্যারদের সাথে আলাপ করব। তারপর সুরতহাল প্রতিবেদন সংগ্রহ করে হাইকোর্টে নিয়ে যাব।’

ময়নাতদন্ত বোর্ডের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হতে কয়েক দিন সময় লাগেই। আমরা মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। এর মধ্যে হার্টের পরীক্ষাও করা হচ্ছে। এই পরীক্ষার রিপোর্টগুলো পেতে কয়েক দিন সময় লাগবে। রিপোর্টগুলো পেলে তখন একটা মন্তব্য দিয়ে আমরা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারব। এই প্রক্রিয়ায় অন্তত পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগতে পারে।’

জেসমিনের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন কিংবা মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া গেছে কি না এমন প্রশ্নে ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, ‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বিচারিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই রিপোর্ট প্রস্তুতও হয়নি। তাই বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে পারছি না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রস্তুত হলে যত প্রশ্ন থাকবে করবেন, সবকিছুরই তখন উত্তর দিতে পারব। এই মুহূর্তে আর বেশি কিছু না।’

সুলতানা জেসমিন (৪৫) নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু সাংবাদিকদের বলেছেন, গত ২২ মার্চ সকালে জেসমিন অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওগাঁর নওজোয়ান মাঠের সামনে থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র‍্যাব সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যান। সেদিন দুপুর পৌনে ২টার পর তারা জানতে পারেন, জেসমিন নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর কিছুক্ষণ পর জেসমিনকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যান র‍্যাব সদস্যরা। ২৪ মার্চ সকালে জেসমিন আইসিইউতে মারা যান। পরদিন ২৫ মার্চ নওগাঁয় মরদেহ দাফন করা হয়। ১৭ বছর আগে স্বামীর ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরে জেসমিন নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তাঁর ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। জেসমিনের ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, তাঁর মা ষড়যন্ত্রের শিকার। র‍্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনের কারণে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়েছে।

নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে র‍্যাব-৫–এর রাজশাহীর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব সাংবাদিকদের বলেছেন, আটকের পরপরই জেসমিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। তিনি দাবি করেন, জেসমিনকে র‍্যাবের কোনো ক্যাম্পেও নেওয়া হয়নি। আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।