ঢাকারবিবার, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চবিতে ডাইনিংয়ের খাবারের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন; এক লাফে বাড়ল ১০ টাকা

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ২৪, ২০২৩ ৫:০২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলের ডাইনিংয়ের খাবারের দাম এক লাফে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তাতে এখন থেকে নিয়মিত খাবার ২৫ টাকার পরিবর্তে ৩৫ টাকা এবং সেহরি ৫০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করে, কোনো ঘোষণা ছাড়াই কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে খাবারের এই নতুন দাম কার্যকর করা হয়। এর আগে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির এক সভায় খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের খাবারের মান সব সময়ই নিম্নমুখী। ভর্তুকি না দিয়ে হঠাৎ দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শিক্ষার্থীদের আয় বাড়েনি, উল্টো ব্যয়ের লাগাম টানতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এ ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ফলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষা হয়নি।

দাম বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরপর শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকেন। সর্বশেষ দাম কমানোর দাবিতে আজ জুমার নামাজের পর বুদ্ধিজীবী চত্বরে মানববন্ধন করেন বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা ‘প্রভোস্ট স্যার, ডাইনিংয়ে আসুন, একসঙ্গে খাই; রমজানে প্রহসন, মানি না, মানব না’ স্লোগান সংবলিত প্লাকার্ড বহন করেন।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, ‘আমরা খাবারের দাম কমানো ও মান ঠিক রাখার দাবিতে রোজা রেখে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। আমরা যখন ভর্তি হই, তখন ২০ টাকা দিয়ে খেতাম। এরপর হঠাৎ তা ২৫ টাকা করা হলো। এখন এক লাফে তা ৩৫ টাকায় নিয়ে গেল।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘পূর্বঘোষণা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই দাম বাড়ানো অন্যায়। আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছি।’

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী স্বপন মিয়া ফেসবুকে লেখেন, ‘২০১৯ সালে প্রথম বর্ষে থাকাকালে ২০ টাকার বিনিময়েও দুবেলা খাইতে পারিনি টাকা বাঁচানোর জন্য। এক বেলা খেয়ে দিন পার করে দিয়েছি। তাই খুব ভালো করে জানি, ক্ষুধা কী জিনিস। প্রথম বর্ষে যারা আছে, তাদের জন্য ৩৫ টাকা আত্মহত্যার মতো। অনেকের ২৫ টাকা দিয়ে দুবেলা খাওয়ার সামর্থ্য নেই। সেখানে ৩৫ টাকা অনেক বেশি। মাননীয় প্রভোস্ট, দয়া করে আমাকে ক্ষুধার্ত রাখবেন না। আমার খাবার নিশ্চিত করুন।’

আসাদ নেওয়াজ নামের এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘মাননীয় প্রশাসন, দয়া করে আমাদের একটা জোরে লাথি মেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। কারণ এই তল্লাটে থাকার মতো অবস্থা আর রইল না। এবার সত্যই সেই বাপ-দাদাদের বলে যাওয়া কথাটাই সত্যি হচ্ছে। পেটে গামছা বেঁধে পড়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

আসাদ নেওয়াজ বলেন, ‘সরকার প্রতি বছর যে কোটি কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছে, সেখান থেকে ন্যূনতম একটা অংশ ভর্তুকি হিসেবে দিলেও তো আজ এই দিন দেখতে হতো না। এটা কোনো দিনও একটা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হতে পারে না। একটা নোটিশ নেই, কোনো ঘোষণা ছাড়াই এভাবে দাম বাড়ানো হলো। এটা আমরা মেনে নেব না।’

খাবারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ডাইনিং ম্যানেজাররাও চালাতে পারছিলেন না। তাঁরা ডাইনিং চালানো ছেড়ে চলে যেতে চান। তাই প্রভোস্ট কমিটির সভায় খাবার ও সেহরিতে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। খাবারের দামের সঙ্গে মানও বাড়ানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, খাবারের মেন্যুতে পরিবর্তন আসছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘নিজ নিজ হলের প্রভোস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দাম বাড়িয়েছেন। শিক্ষার্থীরাও দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল দাম বাড়িয়ে হলেও যেন খাবারের মান বাড়ানো হয়। জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে। অনেক কিছুর দাম দ্বিগুণও বেড়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে খাবারের দাম ১০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেহেতু অসন্তোষ দেখাচ্ছে, তাই আমরা রাতে এ নিয়ে বৈঠকে বসব।’