ঢাকারবিবার, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

স্মৃতিতে অম্লান জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মরহুম মানজারুল রানা

তানভীর মাসুদ | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ১৬, ২০২৩ ১:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঐতিহ্যবাহী দামাল- সামার ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ঐতিহাসিক আবহনী- মোহামেডান ম্যাচে আমার আইকন বাংলাদেশের লিজেন্ডারি ক্রিকেটার বীর চট্টলার কৃতি সন্তান , প্রিয় দল আবাহনীর সাবেক প্রাণ ভোমরা আকরাম খান ও সে সময় আবাহনীর হয়ে খেলা ইংল্যান্ড জাতীয় দলের সাবেক বিখ্যাত খেলোয়াড় নেইল ফেয়ার ব্রাদার এর অসাধারণ ইনিংস দেখে ক্রিকেটপ্রেমে বুঁদ হয়ে ছিলাম তখন থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের নাড়ি নক্ষত্র নখদর্পনে রাখার চেষ্টা করেছি বরাবরে । প্রিয় দল আবহনী এবং আমাদের গর্ব বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন অন্ধ সমর্থক হিসেবেই হোক কিংবা ভাগ্য গুনেই হোক কিংবা ক্রীড়াপ্রেমী হিসেবেই হোক বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটারদের সান্নিধ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অনেক প্রথিতযশা ও স্বনামধন্য ক্রিকেট খেলোয়াড়দের সান্নিধ্যে আসার বেশ ভালই সুযোগ হয়েছে আমার । অনেকের সাথে আবার গড়ে উঠেছে পারিবারিক সম্পর্ক ।

 

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে ডাক পেয়ে নিজ পারফরম্যান্স গুনে খুবই অল্প সময়ে যেসব ক্রিকেটার জনমানসে ঠাঁই করে নিয়েছেন তাদের মধ্যে মানজারুল ইসলাম রানা অন্যতম । সদা স্মিত হাসি এবং মৃদুভাষী এই ক্রিকেটার এর সাথে আমার বিশেষ সখ্যতা না থাকলেও ‌ অল্প সময়ের কথোপকথনে আমার হৃদয় জিতে নিয়েছিলেন , যেভাবে উইকেট শিকার করে কিংবা ব্যাট হাতে ঝড়ো গতিতে রান করে হৃদয় জিতে নিয়েছিলেন আম-জনতার । ২০০৪ সালে ডিসেম্বর মাসে ( বাংলাদেশ -ভারত ) সিরিজে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারিয়ে তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে বীর চট্টগ্রামের মাটিতে পা রেখেছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল, ঘাঁটি গেড়েছিল হোটেল আগ্রাবাদে । হোটেলের সুইমিং পুলের একজন নগণ্য ‌সদস্য হিসেবে খুবই কাছ থেকে ভারত- বাংলাদেশ এর প্লেয়ারদের কে পরখ করেছিলাম । এখনকার মতো সে সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থার যথেষ্ট বাড়াবাড়ি না থাকলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও উভয় দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে নির্লিপ্ত ভাবছিল । ভারতের লিজেন্ডারি অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি , যুবরাজ ও হরভজন সিং এর সাথে প্রায় মিনিট দশেকের মত কথা হয়েছিল সেসময় । চট্টগ্রামের ম্যাচের আগের দিন জুমাবার ছিল । তখনো জুমার নামাজের ঘন্টাখানেক বাকি । সুইমিং শেষে ফ্রেশ হয়ে হোটেল আগ্রাবাদের গেটের বাইরে আসতেই চোখে পরলো রাজিন সালেহ এবং মানজারুল ইসলাম রানা কে, জায়নামাজ হাতে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। আমার সাথে আই কন্টাক হতেই হাত বাড়িয়ে দিলাম, খুব সহজেই দুজনেই সানন্দে তা গ্রহণ করল এবং ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে চলে আসার সময় মানজারুল রানা জিজ্ঞেস করলেন আগামী কালকের ম্যাচ দেখতে যাব কিনা …?? আমি বললাম অবশ্যই । পাক্কা ১০ মিনিট ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলেছিলেন নিরহংকারী এই ক্রিকেটার । চলে আসার সময় জড়িয়ে ধরেছিলেন । ক্রিকেটীয় পারফরম্যান্স এবং সেই দিনের অমায়িক ব্যবহারের কারণে আমার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন মানজারুল ইসলাম রানা । সেই থেকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের স্কোয়াড ঘোষণা করলেই মানজারুল ইসলাম রানার নাম আছে কিনা আগে দেখতাম কিংবা বল অথবা ব্যাট করতে নামলে মানজারুল রানার সফলতা কামনা করতাম কায়মনোবাক্যে। পরবর্তীতে ইনজুরির কারণে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ঠাঁই হয়নি মানজারুলের ।

 

২০০৭ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৬ ই মার্চ (তারপরের দিন ১৭ ই মার্চ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক ম্যাচ) সন্ধ্যায় টিভি মারফত জানতে পারলাম খুলনায় ‌এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মানজারুল রানা এবং আরেক প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার সেতু । মুহুর্তের মধ্যে ভেসে উঠলো মানজারুল রানার সেই চিরচেনা স্মিত হাসি এবং সেই কথোপকথন মুহূর্ত , নিঃশব্দে চোখের কোনে নোনা জল ভেসে উঠেছিল । সে সময় বিশ্বকাপ খেলার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানরত রানার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশের লিজেন্ডারি ক্রিকেটার মাশরাফি ঘোষণা দিলেন

“রানার জন্য খেলবে বাংলাদেশ”।

 

সত্যিই পরের দিন ভারতের বিপক্ষে মানজারুল রানার জন্যই খেলেছিল পুরো বাংলাদেশ দল । রানা কে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে ভারতকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে বাংলাদেশের লাখো-কোটি জনগণকে মধ্য রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে রাজপথে নেমে বিজয় উল্লাসের সুযোগ করে দিয়েছিল বীর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল । সেদিন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রতিটি সদস্য এবং বাংলাদেশের জনগণের সাথে অশরীরী উপস্থিতি ছিল মানজারুল রানার ।

 

সদা স্মিত হাস্য বদন, বিনয়ী ও নিরহংকারী মানজারুল ইসলাম রানার মৃত্যুবার্ষিকীতে ‌ সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন রানা ভাইকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করেন ।

 

লেখক: তানভীর মাসুদ