গত এক বছর আগে শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। সে সময় পূর্ব এবং দক্ষিণ ইউক্রেন থেকে বহু মানুষ এবং শিশুকে জোর করে নিজেদের দেশে নিয়ে যায় রাশিয়া। বস্তুত, শহর অবরুদ্ধ করেও ইউক্রেনের নাগরিক এবং শিশুদের রাশিয়ায় যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। এবার সেই শিশুদেরই ফেরত পেতে চায় ইউক্রেন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় জোর করে ডিপোর্ট (নির্বাসিত) করার কাহিনি।’
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার-সংক্রান্ত সভায় যোগ দিয়েছেন কুলেবা। সেখানেই এ বিষয়ে সরব হয়েছেন তিনি। বলেছেন, ইউক্রেনের শিশুদের ছিনিয়ে নেওয়া রাশিয়ার সবচেয়ে বড় অপরাধ।
আমেরিকার একটি মানবাধিকার সংগঠন জানায়, ইউক্রেনের অন্তত ছয় হাজার শিশু রাশিয়ার দখল করা ক্রাইমিয়ায় আছে। রাশিয়ার সেনা সেখানেই তাদের রেখেছে। এই শিশুদের রাজনৈতিক কারণেই সেখানে রাখা হয়েছে বলে ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। রাশিয়া অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় বলেছে, রাশিয়ার ভিতরে অন্তত ৪৩টি ক্যাম্পে ইউক্রেনের শিশুদের রাখা হয়েছে। মস্কো এই ক্যাম্পগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে বলে তাদের দাবি।
ইউক্রেনের বক্তব্যের পাশে দাঁড়িয়েছে জার্মানি। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক নিঃশর্তে ইউক্রেনের শিশুদের ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। জাতিসংঘের বৈঠকে তিনি বলেছেন, শিশুদের তাদের জায়গা, তাদের বন্ধু, তাদের আত্মীয় পরিজনদের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এক ধরনের অপরাধ। কীভাবে বেঁচে আছে ওই শিশুরা? এই মুহূর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া উচিত। নিজেদের জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
তার অভিযোগ, যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়ার সেনা ১৫টি শিশুকে অপহরণ করেছিল। তারমধ্যে সবচেয়ে ছোট শিশুটির বয়স মাত্র নয় বছর। সমস্ত শিশুকে রাশিয়া না ছাড়া পর্যন্ত জার্মানি চুপ করবে না বলেও এদিন কার্যত হুমকি দিয়েছেন বেয়ারবক। শুধু শিশু নয়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে জার্মানি। বস্তুত, যুদ্ধাপরাধের মামলা হয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতে। জাতিসংঘের মানবাধিকার-সংক্রান্ত সংস্থাতেও এ বিষয়ে সরব হয়েছে ইউক্রেন। তবে এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলল ইউক্রেন।