ঢাকাশনিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একই দিনে কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দাবি করছে, জনগণের কাছে তারা সাড়া পেয়েছে

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩ ১২:৫৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ইউনিয়নের পর মহানগর পর্যায়ে একই দিনে কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দাবি করছে, জনগণের কাছে তারা প্রত্যাশিত সাড়া পেয়েছে। বিএনপি মনে করছে, তাদের কর্মসূচির মাধ্যমে বড় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে। দলের নেতারা বলছেন, তৃণমূলের কর্মসূচিতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে তাদের এই বিশ্বাস জন্মেছে। আওয়ামী লীগ বলছে, রাজপথে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করবে তারা, আগামী সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ ছাড়বে না। বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে ধারাবাহিক মাঠে থাকার মাধ্যমে তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতিও হয়ে যাচ্ছে। 

ঢাকার বাইরে পর পর দুটি ভালো পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করার পর আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা পর্যায়ে একই কর্মসূচি করবে বিএনপি। একই দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগও।

ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হলেও মহানগরের কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ। দুই দল প্রায় একই সময়ে সমাবেশ করলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে জেলা পর্যায়ে দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর আগেও জেলা পর্যায়ের কর্মসূচিতে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।আওয়ামী লীগ
সারা দেশে বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনকে নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির বিপরীতে শান্তি সমাবেশের মধ্য দিয়ে নিজেদের নির্বাচনী প্রস্তুতিও গুছিয়ে আনতে চায় ক্ষমতাসীনরা। ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার কারণে বিএনপি হঠাৎ বড় কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন জমাতে পারবে না বলেও মনে করে দলটি।আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে নিয়মিত কর্মসূচি থাকবে আওয়ামী লীগের। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবেন। সারা দেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিগুলোর আয়োজনে ‘শান্তি সমাবেশ’ কর্মসূচি পালন হতে থাকবে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রার দিনেও জেলা পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘বিএনপি তাদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে, এটা একটা ভালো দিক। কারণ এর মধ্য দিয়ে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, তারা নির্বাচনে আসবে। আমরাও আমাদের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপিকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দিতে চান না আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তাঁরা মনে করেন, একতরফা কর্মসূচি পালনের সুযোগ দিলে বিএনপি রাজপথে সহিংসতা চালানোর মধ্য দিয়ে মাঠ গরম করে ফেলতে পারে। সে কারণে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি চলমান রাখা হবে। তবে দলের নেতাকর্মীদের আক্রমণাত্মক ভূমিকা না নিতে নির্দেশনা দেওয়া থাকবে।দলের একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি পালনের কথা ভাবা হচ্ছে। শিগগিরই সারা দেশে শরিকদের সঙ্গে নিয়ে কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু হতে পারে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘শান্তি সমাবেশের নামে আমরা শুধু পাল্টা কর্মসূচি পালন করছি না। এর মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। এর মধ্য দিয়ে আমাদের নির্বাচনী প্রচারের কাজ হচ্ছে। জনগণ যেন নির্বাচনে অংশ নেয়, আমাদের আবারও ভোট দেয়, সেসব বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি।’

বিএনপি
গত শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং গত শনিবার রাজধানীর বাইরে ১১ মহানগরে পদযাত্রা করেছে বিএনপি। দলের সাংগঠনিক ১৩ মহানগরে ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলের নেতাকর্মীরা।

বিএনপি নেতারা বলেন, মহানগরের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নামে রাজপথ দখলে রাখলেও পদযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেনি। তবে পুলিশ বিএনপিকে স্বাচ্ছন্দ্যে কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। কর্মসূচির আগে ভীতি সৃষ্টি করতে নেতাকর্মীদের বাড়ি তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করেছে।

গত শনিবার রংপুর মহানগরে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে পদযাত্রা হয়েছে। গতকাল কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলার মুখেও নেতাকর্মী সরে যাননি। মার খেয়েছেন, কিন্তু মাঠ ছাড়েননি। মহানগর পর্যায়েও নেতাকর্মীদের একই ধরনের মনোভাব ছিল। গত বছর গণসমাবেশে যেভাবে বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা কর্মসূচি সফল করেছেন, সেই মনোবল তাঁদের এখনো আছে। বাধা ডিঙিয়ে কর্মসূচি সফল করাটা নেতাকর্মীদের অভ্যস্ততায় পরিণত হয়েছে।

পদযাত্রায় অংশ নেওয়া বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেন, তাঁরা সরকারবিরোধী আন্দোলন তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। এটাই তাঁদের সার্থকতা। এখন এই আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে তাঁদের কর্মপন্থা তৈরি হচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যে আরো বড় কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আসবেন তাঁরা।

ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। দুই নেতাই বলেন, পদযাত্রায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা গেছে। ভয়ভীতি নিয়ে সাধারণ মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলেও একসময় পদযাত্রার সঙ্গে মিশে গেছে। এতে স্পষ্টত বুঝা যায়, মানুষের ভীতি কেটে গেছে। বড় আন্দোলনের জন্য সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুত।

অবশ্য ঢাকা মহানগরের কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি সব সময় চিন্তিত থাকে। চূড়ান্ত আন্দোলন সফল করতে হলে ঢাকাকে সফল হতে হবে। তাই মহানগরে বেশি বেশি কর্মসূচি দিয়ে তাদের সাংগঠনিক অবস্থা যাচাই করা হচ্ছে। দলের নেতারা বলেন, মহানগরের কর্মসূচিতে আগের চেয়ে অংশগ্রহণ বাড়লেও অতীতের ব্যর্থতার কারণে তাঁরা এখনো আশ্বস্ত হতে পারছেন না।