ঢাকারবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বৈদেশিক ঋণ মাথাপিছু ৩২ হাজার ৭৪০ টাকা

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩ ১:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দেশে অর্থনৈতিক চাপের মুখে বেড়েছে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ। বিদায়ি অর্থবছর (২০২১-২২) মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩২৪ মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ১০১ টাকা দরে) তা প্রায় ৩২ হাজার ৭৪০ টাকা।

সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত ‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্স ইন টু বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগের অর্থবছরে (২০২০-২০২১) মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ছিল ২৯৯ মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা দরে) যা ছিল প্রায় ২৫ হাজার ৪৭০ টাকা। এক অর্থবছরের ব্যবধানে পরিবর্তিত ডলার মূল্যে এই ঋণের পরিমাণ মাথাপিছু বেড়েছে প্রায় সাত হাজার ২৭০ টাকা। অন্যদিকে দিন দিন কমছে সহজ শর্তের বা স্বল্পসুদের ঋণ।

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ডে জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি যেকোনো দেশের জন্য নিরাপদ। বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ জিডিপির সাড়ে ১৫ শতাংশের নিচেই রয়েছে।

‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্স ইন টু বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে (গত জুন পর্যন্ত) বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি রয়েছে পাঁচ হাজার ৫৬০ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার, যা টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ১০১ টাকা দরে) দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৮৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ধরে হিসাব করলে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩২৪ ডলার।

অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল চার হাজার ৪০৯ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) দাঁড়ায় তিন লাখ ৭৪ হাজার ৮৯৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরে হিসাব করলে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল তিন হাজার ৮৪৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল তিন হাজার ৩৫১ কোটি ১৮ লাখ ডলার।

এ প্রসঙ্গে নাম না প্রকাশ করার শর্তে ইআরডির একজন কর্মকর্তা বলেন,  ‘আমাদের ঋণের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এবং শোধ করার সক্ষমতাও রয়েছে। আরো বেশি ঋণ নেওয়া যেতে পারে; কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোসহ যেসব খাতে ঋণের টাকা খরচ করলে বেশি রিটার্ন আসবে, সেসব খাতেই ঋণ নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধসহ যথাসময়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ করার দিকে জোর দেওয়া উচিত।’

‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্স ইন টু বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট যে পরিমাণ ঋণের স্থিতি রয়েছে, এর মধ্যে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জাপান, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, ডেনমার্ক ও জার্মানির কাছে মিলে মোট ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার।

এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), ইফাদ, ওপেক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) মিলে মোট ঋণের স্থিতি তিন হাজার ৩৮৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলার।
এ ছাড়া চীন, ভারত, স্পেন, যুগোস্লাভিয়া, রাশিয়া এবং বেলারুশ মিলে মোট ঋণের স্থিতি এক হাজার কোটি ৯৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রতিনিয়ত চড়া সুদের বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে থাকছে অধিক শর্তও। আগে যেসব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে সুদবিহীন কিংবা নামমাত্র সুদে ঋণ পাওয়া যেত, এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি বিবেচনায় সস্তা ঋণ পাওয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আগের চেয়ে কমে গেছে অনুদান।

ইআরডি সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ঋণের কঠিন শর্ত ও উচ্চ সুদ কার্যকর করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি সুদের হার শূন্য থেকে বাড়িয়ে ১.২৫ শতাংশ কার্যকর করেছে। এর সঙ্গে আগে থেকে অব্যাহত থাকা সার্ভিস চার্জ দশমিক ৭৫ শতাংশ বলবত্ রয়েছে। তাই সব মিলিয়ে এখন সুদের হার দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশ। এ ছাড়া ঋণ পরিশোধের সময়ও কমিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।

এ ছাড়া জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কাছ থেকে বার্ষিক শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ সুদহারে ঋণ পেত বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ৪০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি সময়ে এই ঋণ পরিশোধের সুযোগ ছিল। এখন সুদহার বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ করেছে জাইকা। তাছাড়া পরিশোধের ক্ষেত্রে রেয়াতকাল ঠিক থাকলেও পরিশোধের সময় ১০ বছর কমিয়ে করা হয়েছে ৩০ বছর।