হিংসা, আমাদের অন্যতম ভয়ংকর অভ্যাসগুলোর একটি। আমরা কেউ সেচ্ছায় হিংসার চর্চা করি, আবার কেউ অনিচ্ছায় বা একদম মনের অজান্তে। হিংসার স্বাভাবিক উৎপত্তির কারণ হলো তুলনা। একে অপরের সাথে নিজেদের তুলনা করতে আমরা খুব পছন্দ করি। কিন্তু তুলনা যখন পছন্দ মাফিক হয়না, তখন আমাদের হতাশা জন্মে। হতাশার দ্রুত কার্যকরী, ক্ষণস্থায়ী কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পন্ন প্রতিষেধক হিসেবে হিংসা উপস্থিত হয়। হিংসা আমাদের ক্ষণিকের সান্ত্বনা দিয়ে হতাশা মুছে দেয়, কিন্তু আমাদের করে তুলে দাম্ভিক ও আক্রমণাত্মক।
হিংসা, সান্ত্বনা কিভাবে দেয়? ধরি, আমার বন্ধু ও আমি একসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলাম। আমার বন্ধু ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হলো, অথবা খুব ভালোমানের একটা চাকরি পেলো। আমি ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলাম না অথবা চাকরিও পেলাম না। এখন যদি আমার মনে হয় যে, ‘আমার বন্ধু আমার চেয়ে এগিয়ে গেলো, আমি কেন পেলাম না, সে মনে হয় কোনো বিশেষ সাহায্য পেয়েছে, সে তো অত ভালো না, তার ভাগ্য আমার চাইতে ভালো’, তাহলে বুঝতে হবে আমি নিজের সীমাবদ্ধতা ও ভুল গুলো না খুঁজে, বন্ধুর দুর্বলতা খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি, এতটুকু পর্যন্ত পরশ্রীকাতরতা, কিন্তু যখনই এই পরশ্রীকাতরতার চরম পর্যায়ে আমরা অন্যের ক্ষতি কামনা করি তখন তা হয় হিংসার প্রতিফলন এবং নিজের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য অযৌক্তিক সান্ত্বনার প্রচেষ্টা। এ ধরনের হিংসা গুলোকে অনেকটা সেচ্ছায় হিংসাপরায়ণতা বলা যায়। যার শেষ পরিণতি হয় পরনিন্দা ও ঘৃণার চর্চা থেকে মনোমালিন্যে। মজার বিষয়- হিংসা যতটা দূরের মানুষকে ঘিরে হয়, তার চাইতে বেশি হয় কাছের মানুষগুলোকে ঘিরে! আমরা বড়ই বিচিত্র।
তবে অনেকসময় আমরা অনিচ্ছাকৃত হিংসার চর্চা করে ফেলি। বন্ধুর বা কাছে মানুষের এমন ভালো কিছু দেখার পর যখন আমাদের খারাপ লাগে, আমরা তাদের সম্পর্কে অসুস্থ চিন্তা করি, কিন্তু প্রকাশ করিনা, তখন তা অনেকটা আমাদের অনিয়ন্ত্রিত অবচেতন মনের প্রকাশিত হিংসা, ইচ্ছাকৃত নয়। এ ধরনের চর্চাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
আমরা মানুষেরা দোষে-গুণেই পূর্ণ। হিংসা আমাদের প্রকৃতি। কিন্তু যে প্রকৃতি মানুষের জন্য ক্ষতিকর, তা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা উচিত। আমাদের বন্ধুরা বা নিকটাত্মীয়গণ একটা উন্নত জিনিস যেভাবেই অর্জন করুক, তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তাদের অর্জনের জন্য শুভকামনা জানানো উত্তম। যদি অনৈতিকভাবে তারা কিছু অর্জন করে, তখনও তাদের নীতিশিক্ষা দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রথম কর্তব্য হওয়া উচিত, আগে নিজেদের পরিশুদ্ধ করে, নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করে, অন্যদের উপদেশ দেয়া, এতে উপদেশ গ্রহণকারীও সহজে আমাদের ভরসা করবে। সবার ভালো সময় একসাথে আসেনা, খারাপ সময়ও না। আজ আমাদের খারাপ, কাল তাদের। আজ তাদের ভালো, কাল আমাদের। আমরা উভয় সময়েই একে অপরের পাশে থাকবো, এবং সবসময়ই যাতে সবার ভালো সময় থাকে সে প্রার্থনা করবো।