বিচারাধীন বিষয় হওয়ায় খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি অবৈধ দখলে রাখা-সংক্রান্ত দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরাতে ব্যারিস্টার সুমনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গত ২৩ জানুয়ারি ও ২৫ জানুয়ারি ব্যারিস্টার সুমন তার ফেসবুক পেজে লাইভে ওই ভিডিও প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে এই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়ি নিয়ে কোনো ধরনের ভিডিও তৈরি ও প্রকাশ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সালাম মুর্শেদীর আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত এই রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানির জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করেছেন।
আদালতে সালাম মুর্শেদীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী, অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। রাজউকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জাকির হোসেন মাসুদ। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
এর আগে সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়িসংক্রান্ত রাজউকের প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়ি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় নেই। তাই বাড়িটি অবমুক্ত করার প্রশ্নই ওঠে না। বাড়িটি রাজউকের সম্পত্তি বলেও এতে দাবি করা হয়।
অন্যদিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করেছে দুদক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাস্তবে ওই এলাকায় রাজউকের লে-আউট নক্সায় কথিত বাড়ির অস্তিত্ব নাই। এক্ষেত্রে সুকৌশলে ওই এলাকার ১০৪ নম্বর রোডে অবস্থিত ওই বাড়িটি ১০৩ নম্বর রোড দেখিয়ে জাল-কাগজপত্র সৃজনপূর্বক হস্তান্তর-নামজারিসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারের দুই সংস্থার দুই ধরনের তথ্য আসায় দুদক একটি নিরপেক্ষ অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুই সদস্যের কমিটি গঠন গঠনসংক্রান্ত দুদকের নথি হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
নথিতে বলা হয়েছে, আব্দুস সালাম মোর্শেদীর বাড়ি-১০, গুলশান-২, ঢাকা ও অন্যদের বিরুদ্ধে রাজউকের চেয়ারম্যানের সহায়তায় পরিত্যক্ত বাড়ি দখলের প্রাপ্ত অভিযোগটি দুই সদস্য বিশিষ্ট টিমের মাধ্যমে অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্মিত। মহাপরিচালক (তদন্ত-১) বরাবর পত্র প্রেরণের জন্য কমিশনের ০৩/২০২৩ নম্বর সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এমতাবস্থায়, ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। সর্বপক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত ৮ ফেব্রুয়ারি রুল শুনানির দিন ধার্য করেন
গত ১১ নভেম্বর সরকারের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে বাড়ি বানানোর অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এ সম্পত্তি সম্পর্কিত সব কাগজপত্র ১০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে রাজউক, গণপূর্ত বিভাগ ও সালাম মুর্শেদীকে নির্দেশ দেন আদালত।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তারও আগে সরকারের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে বাড়ি বানানোর অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে রিট করা হয়। ৬ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ রিট দায়ের করেন।
গত ১২ ডিসেম্বর সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়িসংক্রান্ত নথি ও প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন দুদককে দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ মামলার মেরিট নিয়ে প্রশ্ন তুলে কোনো কিছু না লিখতে মিডিয়ার প্রতি নির্দেশ দেন।
১৩ নভেম্বর সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি সম্পর্কিত কাগজপত্র হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। সেদিন সালাম মুর্শেদীর পক্ষে কাগজপত্র দাখিল করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা।
এরপর ২৩ জানুয়ারি দুদক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন এফিডেভিট আকারে হাইকোর্টে দাখিল করেন। ওই দিন ব্যারিস্টার সুমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি লাইভ বক্তব্য প্রচার করেন। এরপর একই বিষয়ে গত ২৫ জানুয়ারি আরও একটি লাভই প্রচার করেন ব্যারিস্টার সুমন। পরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানায় সালাম মুর্শেদীর আইনজীবীরা।