ঢাকাশনিবার, ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

স্বার্থ হাসিল হয়ে গেলে হেফাজত ঠিকই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে : মঈনুদ্দিন রুহী

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে ‘নরম সুর’ ভেসে আসছে। সংগঠনটির বর্তমান নেতৃত্ব সরকারের বিষয়ে ‘নমনীয়’ বলে রাজনীতির মাঠে নানা কানাঘুষা চলছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৭ ডিসেম্বর বৈঠকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হেফাজত নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী কারামুক্ত হন। তার মুক্তি হেফাজত নেতারা ‘বৈঠকের তাৎক্ষণিক সুফল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এরপর থেকে সংগঠনটি কঠোর কোনো কর্মসূচি পালন করেনি। এমনকি সাম্প্রতিক দেশীয়-আন্তর্জাতিক কোনো ধর্মীয় বিষয়ে ‘কড়া’ বিবৃতিও দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠকের মাত্র ১২ দিন পর চট্টগ্রামে এসে সংগঠনটির আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও সিনিয়র নায়েবে আমির শাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়ার সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। আর গত ২২ মাসে পাঁচবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ‘আনুষ্ঠানিক’ বৈঠক হয়েছে হেফাজতের। গত ১৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে সর্বশেষ বৈঠকটি হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৭ ডিসেম্বরের পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে একডজন নেতাসহ হেফাজতের অনেক কর্মী কারামুক্ত হন। তবে এখনো একাধিক আলেমসহ ২০ নেতাকর্মী কারাবন্দি। তাদের মধ্যে আছেন সংগঠনের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও অর্থসম্পাদক মুনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা হারুন ইজহার প্রমুখ। মুফতি ইজহার ওসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে প্রচার রয়েছে।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হেফাজতের ‘সুসম্পর্কে’ ঈর্ষান্বিত হয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতারা।

তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উত্থাপিত তাদের দাবিগুলো পূরণ হতে চলছে। বিশেষ করে গ্রেপ্তার নেতাকর্মীরা মুক্তি পাচ্ছেন। এ অবস্থায় হেফাজতের বিরুদ্ধে ‘রাজনীতি ও মুচলেকা’ বিষয়ক নানা প্রচারণা ছড়ানো হচ্ছে।

তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উত্থাপিত তাদের দাবিগুলো পূরণ হতে চলছে। বিশেষ করে গ্রেপ্তার নেতাকর্মীরা মুক্তি পাচ্ছেন। এ অবস্থায় হেফাজতের বিরুদ্ধে ‘রাজনীতি ও মুচলেকা’ বিষয়ক নানা প্রচারণা ছড়ানো হচ্ছে।

শফীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত হেফাজতের সাবেক একাধিক নেতা বলেছেন, স্বার্থ হাসিলে হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব সরকারের হয়ে কাজ করছে। অথচ এর আগে সংগঠনের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকে বিএনপির হয়ে কাজ করতেন।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, ‘আহমদ শফী হেফাজত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অরাজনৈতিক ও ধর্মীয় আধ্যাত্মিক সংগঠন হিসেবে। হেফাজত কখনো রাজনীতি করেনি। সামনেও করবে না। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হেফাজতকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে, সেই ষড়যন্ত্র এখনো থামেনি। কিছু মহল নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য হেফাজতকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। শফী ও জুনাইদ বাবুনগরীর দেখানো পথেই আমরা চলছি। রাজনৈতিক স্বার্থে হেফাজতকে ব্যবহার করার কোনো অপচেষ্টা সফল হবে না।’

সরকারের সঙ্গে হেফাজতের ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন, ‘হেফাজতের বর্তমান কার্যক্রমে কিছুটা পরিবর্তন চোখে পড়ছে। সরকারের সঙ্গে হয়তো কিছু একটা হয়েছে। না হয় ওরা এমন নীরব থাকার কথা নয়। হেফাজত তো জন্মের পর থেকে উচ্ছৃঙ্খল। নানা ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে লিপ্ত ছিল সব সময়। সরকার থেকে সুবিধা নিতে হেফাজতের নীরবতা যদি সাময়িক ও ধোঁকাবাজি হয়, তাহলে তা বুমেরাং হবে আওয়ামী লীগের জন্য।’

শফীপন্থি হিসেবে পরিচিত মঈনুদ্দিন রুহী বলেন, ‘হেফাজতের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতা আগে বিএনপির লাভ হয় মাঠে—এমন কর্মসূচি দিতে সক্রিয় ছিলেন। এখন স্বার্থ হাসিল করতে, মামলা-কারাগার থেকে বাঁচতে জোব্বা পরে হেফাজত সেজেছেন। হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব সরকারের গোলামি করছে। স্বার্থ হাসিল হয়ে গেলে ঠিকই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে।’

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আমাদের দুটি প্রধান দাবি, গ্রেপ্তার নেতাকর্মীর মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন। এরই মধ্যে বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। সুতরাং মাঠ গরম করার কর্মসূচি কেন দেব? শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান, দেশের অভিভাবক। দাবি-দাওয়া পূরণে তো তার কাছেই যেতে হবে। এতে দোষের কী?’

হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মুহাম্মদ ইদ্রীস বলেন, ‘হেফাজত নিয়ে এখন নানা মিথ্যাচার করা হচ্ছে। সরকার আমাদের কাছে কোনো মুচলেকা চায়নি। আর আমরাও কোনো মুচলেকা দিইনি। সরকারের সঙ্গে হেফাজতের রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তবে দ্বীনি বিষয়ে জাতির প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ কোনো আন্দোলনের প্রয়োজন হলে হেফাজত এর নেতৃত্বেই থাকবে, ইনশাআল্লাহ।’