নাদিয়া সুলতানার (১৯) স্বপ্ন ছিল ফার্মাসিস্ট হবেন। সেই স্বপ্নপূরণে দুই সপ্তাহ আগে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হন। ক্লাস করতে এক সপ্তাহ আগে নারায়ণগঞ্জের বাসা ছেড়ে উত্তরার একটি মেসে ওঠেন। এক সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর সেই স্বপ্নযাত্রার ইতি ঘটল।
আজ রোববার ক্লাস না থাকায় এক বন্ধুর সঙ্গে তাঁর মোটরসাইকেলে করে বই কিনতে উত্তরার বাসা থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যাচ্ছিলেন নাদিয়া সুলতানা। বেলা পৌনে একটার দিকে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় তাঁদের মোটরসাইকেলটিকে একটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তায় ছিটকে পড়েন তাঁরা। বাসটি নাদিয়াকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর বন্ধু মোটরসাইকেলচালক মেহেদি। তবে তাঁর আঘাত গুরুতর নয় বলে জানা গেছে।মেয়ের মৃত্যুর খবরে নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে আসেন মা-বাবা। তাঁদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায়। তিন বোনের মধ্যে সবার বড় নাদিয়া। বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন একটি পোশাক কারখানায় সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদে চাকরি করেন।
হাসপাতালের মর্গের সামনে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘মেয়ের স্বপ্ন ছিল বড় ফার্মাসিস্ট হবে। আমার সব শেষ! ওরা আমার সব স্বপ্ন শেষ করে দিল! আমি পরিবার নিয়ে খেয়ে না-খেয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করিয়েছিলাম।’
কথা বলতে বলতে চেয়ার থেকে পড়ে যান জাহাঙ্গীর হোসেন। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, ‘আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব!’ পরক্ষণেই উঠে মেয়ের লাশ দেখতে মর্গের দিকে দৌড়ে যেতে শুরু করেন। আত্মীয়স্বজন তাঁকে নিবৃত্ত করেন।
অন্যদিকে মা পারভিন আক্তার মেয়ের জন্য আহাজারি করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাঁকে সুস্থ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অন্যরা। এ অবস্থায় সেখানে উপস্থিত অন্যদেরও এই মা-বাবার সন্তান হারানোর শোক ছুঁয়ে যায়। তাঁদের অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
এদিকে বাসচাপায় নাদিয়ার মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কাওলা এলাকার ফুটওভারব্রিজের নিচে জড়ো হন নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর সহপাঠীসহ কয়েক শ শিক্ষার্থী। তাঁরা সড়ক অবরোধ করে চালককে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
আবদুর রহমান নামে নাদিয়ার এক সহপাঠী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাত্র দুই দিন আমাদের ক্লাস হয়েছে। এর মধ্যে আমরা এক বন্ধুকে হারালাম।’ দায়ী চালককে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকায় মাঝেমধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীরা মারা যাচ্ছেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হয়। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না।
নাদিয়ার সহপাঠী ও অন্য শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর সন্ধ্যার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে চলে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন চালককে গ্রেপ্তারের। আমরা বলছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে চালককে গ্রেপ্তার করা হবে। পরে তাঁরা রাস্তা ছেড়ে চলে যান।’
পুলিশ জানায়, তারা বাসটি জব্দ করেছে। তবে বাসের চালক ও তাঁর সহযোগী পালিয়ে গেছেন।
এই ঘটনায় নাদিয়ার বাবা সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করেছেন বলে জানান ভাটারা থানার ওসি এ বি এম আছাদুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।