ঢাকাশনিবার, ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গাজীপুরের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জানুয়ারি ২২, ২০২৩ ১২:১০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গাজীপুরের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সই করা এক চিঠিতে এই ক্ষমা করার কথা জানানো হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, তিনি আজ শনিবার চিঠি পেয়েছেন।

২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এর পরপরই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মেয়র পদ থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে গোপনে ধারণ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তাতে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও গাজীপুর জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করে।

ক্ষমা ঘোষণা করে দেওয়া ওবায়দুল কাদেরের সই করা চিঠিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের স্বার্থ, আদর্শ, শৃঙ্খলা, তথা গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পরিপন্থী সম্পৃক্ততার জন্য ইতিপূর্বে জাহাঙ্গীর আলমকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার/অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ স্বীকার করে তিনি ভবিষ্যতে এই ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত না হওয়ার বিষয়ে লিখিত অঙ্গীকার করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দলের গত ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুসারে তাঁকে ক্ষমা করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে তা ক্ষমার অযোগ্য বিবেচিত হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বহিষ্কার হওয়া নেতাদের আবেদনের ভিত্তিতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার আগে যাঁরা দোষ স্বীকার করে আবেদন করেছিলেন, তাঁদের ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছিল। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাঁরা দোষ স্বীকার করে আবেদন করবেন, তাঁদেরও যাচাই-বাছাই করে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত হয়।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের ঐক্য ও শক্তি বাড়াতে বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিটি আবেদন আলাদা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে দলের একটি কমিটিও রয়েছে।

দলীয় সূত্র আরও জানায়, জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা ঘোষণা করার অর্থ এই নয় যে তিনি তাঁর আগের পদ ফিরে পাবেন। অর্থাৎ এই চিঠির ফলে তাঁর মেয়র পদ ফিরে পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। এ ছাড়া বহিষ্কার হওয়ার সময় জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এর মধ্যে গত বছর ১৯ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন মহানগর কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতি হিসেবে আজমত উল্লাহ খান পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আতাউল্লাহ মণ্ডল। জাহাঙ্গীর বহিষ্কার হওয়ার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও সরকারের একটা অংশ বেশ তৎপর ছিল। ওই নেতা আরও বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের নির্বাচনের আগে বরাবরই ক্ষমা করে দেওয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য অপরাধে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। বলা হয়ে থাকে, জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের লক্ষ্য নিয়েই দল ও সরকারের একটা অংশের তৎপরতার ফলে সাধারণ ক্ষমার আওতা বাড়ানো হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলমের কিছুদিন পরই অশালীন ও নারীর প্রতি অবমাননাকর কথা বলে মন্ত্রিত্ব ও দলের পদ হারান সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর তিনিও আবেদন করেছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, মুরাদ হাসানের বিষয়টি সুরাহা হয়েছে কি না, তা দলের অধিকাংশ নেতা জানেন না।

জাহাঙ্গীর আলমের আগে রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করার দায়ে। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারেও পাঠানো হয়। এর আগে পবিত্র হজসহ ধর্মীয় নানা বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ২০১৪ সালে প্রথমে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন লতিফ সিদ্দিকী। এরপর তাঁকে দলের সভাপতিমণ্ডলী ও সাধারণ সদস্য পদ থেকেও বাদ দেওয়া হয়। দলের চাপে তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

লতিফ সিদ্দিকী আর দলে ফিরে আসতে পারেননি। মুরাদ হাসান ও কাটাখালীর মেয়রের ভাগ্যও শিগগিরই খুলবে বলে মনে করছেন না আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ভাগ্যবান বলেই মনে করছেন নেতারা।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করার খবর দ্রুত গাজীপুরে ছড়িয়ে পড়ে। সমর্থকদের অনেকেই বলেছেন, দলে ফেরায় মেয়র পদও ফিরে পাবেন জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুরের ছয়দানা এলাকায় জাহাঙ্গীরের বাসভবন ও এর সামনে আবারও নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা গেছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং জাহাঙ্গীর আলমকে অভিনন্দন জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়েছেন।

জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থক নাজমুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গতি আনতেই তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে সংগঠন গতি পাবে এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে মত তাঁদের।

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দল আমাকে ক্ষমা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। আমি দেশ ও জনগণের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করে যেতে চাই। এর জন্য সবার কাছে দোয়া চাইছি।’