দুই দশক আগে সংঘটিত ভারতের গুজরাটের বহুল আলোচিত দাঙ্গায় দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নির্মিত ডকুমেন্টারি ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যবস্থা নিয়েছে দেশটির সরকার। ইতোমধ্যে টুইটার ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে বিবিসির এই ডকুমেন্টারির লিঙ্ক সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার।
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের এই নির্দেশের ব্যাপারে অবগত দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ শিরোনামের বিবিসির ডকুমেন্টারিটি নিয়ে অনেকের টুইট এবং ইউটিউব ভিডিও মাইক্রোব্লগিং ও ভিডিও-শেয়ারিং ওয়েবসাইটগুলোতে আর পাওয়া যাচ্ছে না।
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় (আইঅ্যান্ডবি) ওই দুই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জায়ান্টকে বিবিসির ডকুমেন্টারির প্রথম পর্বটি ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে বলে বিষয়টির ব্যাপারে অবগত ব্যক্তিরা বলেছেন।
এনডিটিভি বলছে, ব্রিটেনের জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসির ডকুমেন্টারি নিয়ে অর্ধ-শতাধিক টুইট মুছে ফেলতে টুইটার কর্তৃপক্ষকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টুইটার ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ নিয়ে করা অনেকের টুইট মুছে ফেলেছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনও রয়েছেন বলে টুইট করে জানিয়েছেন তিনি।
টুইটারে তিনি লিখেছেন, সেন্সরশিপ। বিবিসির ডকুমেন্টারি নিয়ে আমার টুইট সরিয়ে নিয়েছে টুইটার। এটি লক্ষাধিক ভিউ পেয়েছিল। বিবিসির এক ঘণ্টার ডকুমেন্টারিতে নরেন্দ্র মোদি ভারতে কীভাবে সংখ্যালঘুদের ঘৃণা করেন, সেই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বিজেপি সরকারের নির্দেশের ব্যাপারে অবগত সূত্রগুলো বলছে, তথ্যপ্রযুক্তি বিধিমালা, ২০২১ এর আওতায় জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় লিঙ্কগুলো সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ইউটিউব এবং টুইটার— উভয় কর্তৃপক্ষ এই আদেশ মানতে সম্মত হয়েছে।
বিবিসির ওই ডকুমেন্টারিকে ‘প্রোপাগান্ডার অংশ’ বলে অভিহিত করেছে ভারত। এই ডকুমেন্টারিতে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব এবং ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন রয়েছে বলে সমালোচনা করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবিসির ডকুমেন্টারিতে বলা হয়েছে, ২০০২ সালে যখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয় তখন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ভয়াবহ সেই দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান। মূলত হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রেনে আগুন লেগে ৫৯ জন নিহত হওয়ার পর সহিংসতা শুরু হয়েছিল।
আল জাজিরা বলছে, বিবিসির ডকুমেন্টারিতে দেখানো যুক্তরাজ্যের তদন্তের প্রতিবেদনটিতে দাঙ্গার ঘটনাকে ‘পদ্ধতিগত সহিংসতা’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই সহিংসতায় ‘জাতিগত নির্মূলের সকল বৈশিষ্ট্য’ রয়েছে এবং নরেন্দ্র মোদির ওপর সরাসরি দায় চাপানো হয়েছে।
তদন্তের তথ্য ডকুমেন্টারিতে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ওই প্রতিবেদনটি কখনোই প্রকাশ করা হয়নি।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিবিসি ওই ডকুমেন্টারি অনুসারে, ব্রিটিশ তদন্ত দল দাবি করেছে— দাঙ্গার সময় মুসলমানদের ওপর টার্গেট করে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য পুলিশকে কাজ করতে বাধা দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এমনকি সূত্রের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়েছে, দাঙ্গায় হস্তক্ষেপ না করার জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে নির্দেশও দিয়েছিলেন মোদি।
তবে নরেন্দ্র মোদি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং ভারতের শীর্ষ আদালতের তদন্তের পরে ২০১২ সালে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া এই অভিযোগ থেকে মোদিকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত আরেকটি পিটিশন গত বছর খারিজ হয়ে যায়।