ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মধ্যে এবার সমুদ্রে হাইপারসনিক (শব্দের চেয়ে অনেক দ্রুতগতি) ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত রণতরি ভাসাল রাশিয়া, এ বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে এ ধরনের নির্ভরযোগ্য অস্ত্র রাশিয়াকে বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে এবং এটি জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে,’
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘তাস’-এর খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রণতরির কমান্ডার এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সঙ্গে ভিডিও মাধ্যমে এসংক্রান্ত বৈঠক করেন, ‘অ্যাডমিরাল গোর্শকভ’ নামের এ জাহাজটি রাশিয়ার একটি বন্দর থেকে বুধবার যাত্রা করে, বন্দরটির নাম উল্লেখ করা হয়নি
রাশিয়ার এই রণতরিতে ‘জিরকন’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে, দূরপাল্লার এ ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে যায়, এটি শনাক্ত বা প্রতিহত করা বেশ কঠিন
এ ছাড়া অ্যাডমিরাল গোর্শকভ রণতরিতে ‘ক্যালিবার-এনকে’ নকশার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত রয়েছে, যার পাল্লা আড়াই হাজার কিলোমিটারেরও বেশি, ইউক্রেন যুদ্ধ চলার মধ্যে এই রণতরি ভাসানো নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে, তবে এর সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, রাশিয়া তা নিশ্চিত করেনি, এ সম্পর্কে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগু বলেন, মূলত রাশিয়ার বিরুদ্ধে হুমকি মোকাবেলা এবং আঞ্চলিক শান্তি ও বন্ধুভাবাপন্ন দেশের সঙ্গে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এর লক্ষ্য
রাশিয়ার জিরকন হাইপারসনিক ব্যবস্থাটির পরীক্ষা চালানো হয় ২০২১ সালের শেষ দিকে, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘মিসাইল ডিফেন্স অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্স’ জানায়, এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার পাল্লা ৫০০ থেকে এক হাজার কিলোমিটারের মধ্যে, এর গতি হচ্ছে ঘণ্টায় ৯ হাজার ৯০০ কিলোমিটারের মতো, এ তথ্য যদি ঠিক হয়, তাহলে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র, এ ছাড়া এতে রাডার ফাঁকি দেওয়ার ‘প্লাজমা ক্লাউড’ পদ্ধতি যুক্ত রয়েছে
তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জটিল কার্যপদ্ধতির কারণে অ্যাডমিরাল গোর্শকভের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে ব্যবহার করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে, রাশিয়ার দিক থেকে এটি কৃষ্ণ সাগর থেকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু এ জন্য এই যুদ্ধজাহাজটিকে তুরস্কের নিয়ন্ত্রণাধীন বসফরাস প্রণালী অতিক্রম করতে হবে, তবে যুদ্ধের শুরুর দিকেই তুরস্ক জানিয়েছিল, তারা বিদেশি কোনো রণতরিকে এই পথে যেতে দেবে না, রণতরিটি ভূমধ্যসাগরের উত্তরাঞ্চল থেকে ইউক্রেনের দিকে হামলা চালাতে পারে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ন্যাটো জোটভুক্ত দেশের ওপর দিয়ে হামলা চালাতে হবে, আর তা হবে যুদ্ধের বড় সম্প্রসারণ,
এর আগে ইউক্রেনের বাহিনীর হামলায় গত বছরের এপ্রিল মাসে রাশিয়ার রণশক্তির অন্যতম প্রতীক ‘মস্কভা’ রণতরি ধ্বংস হয়, বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যাডমিরাল গোর্শকভ ভাসানোর মধ্য দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘বলতে চাওয়ার মতো’ কিছু করে দেখাতে চাচ্ছেন,
কার্ল স্কুচটার নামের একজন বিশ্লেষক বলেন, রণতরি মোতায়েন করার ব্যাপারটি সামরিক গুরুত্ব প্রতিষ্ঠার চেয়ে পুতিনকে রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরের সুযোগ দেবে বেশি, পুতিন দেখাতে চান, যুদ্ধে ইউক্রেন বড় মূল্য দিলেও রাশিয়া এখনো বড় বৈশ্বিক পরাশক্তি,
সূত্র : সিএনএন