ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, প্লাস্টিক বোতল প্রতিনিয়ত পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। বিশেষ করে বেভারেজ কম্পানিগুলো কোমল পানীয় বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করছে। তারা ব্যবসা করে পরিবেশের দূষণ করবে এটা হতে পারে না। প্লাস্টিক দূষণ রোধ করতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তবে জনগণকেও যত্রতত্র প্লাস্টিক বোতল ফেলা বন্ধ করতে হবে।আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর মহাখালী টিএন্ডটি মাঠে প্লাস্টিক দূষণরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিত্যক্ত প্রায় অর্ধ কোটি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করা নানা প্রতিকৃতি প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি।
পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন সেভ আর্থ সেব বাংলাদেশ শিরোনামে ০৯ দিন ব্যাপী (৩০ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ০৭ জানুয়ারি ২০২৩) এই বোতল প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ড্রেন বা লেক পরিষ্কার করতে গেলে আমরা বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য পাই। এসব প্লাস্টিকের কারণে ড্রেনগুলো ব্লক হয়ে যায়। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও সুয়ারেজ লাইনে পয়োবর্জ্যের লাইন দেওয়া হয়েছে। ৪ জানুয়ারি গুলশান, বনানী, নিকেতন ও বারিধারা এলাকায় অভিযান চালাব।’
তিনি আরো বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা মানুষের প্রয়োজনেই জলজ প্রাণী, কচ্ছপ, মাছ, বৃক্ষ সবই সৃষ্টি করেছেন। এগুলো পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অথচ আমরা নির্দয় হয়ে এগুলো ধ্বংস করছি। যারা ধ্বংস করছে তারা চিন্তা করেন না আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের, তারা চিন্তা করেন না লাল-সবুজের পতাকার। তারা চিন্তা করেন না কষ্টার্জিত এই দেশটার। দেশপ্রেম থাকলে কেউ দেশের ক্ষতি করতে পারে না।’
মেট্রো রেলে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিজয়ের মাসে আমাদের মেট্রো রেল উপহার দিয়েছেন। কিছুদিন আগেই পদ্মাসেতু উপহার দিয়েছেন। অনেকে বলছিল এগুলো সম্ভব হবে না। কিন্তু আজ সম্ভব হয়েছে। তাই কারো কথায় কান দেওয়া যাবে না। মেট্রো রেল, পদ্মাসেতু এগুলো জনগণের সম্পদ। এগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সবার। দয়া করে মেট্রো রেল পরিষ্কার রাখুন, ট্রেন, বাথরুম, প্লাটফর্ম পরিষ্কার রাখুন। আমরাই তো ব্যবহার করব। এর সুফল তো আমরাই পাব। আমাদেরই সম্পত্তি। এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাও আমাদের দায়িত্ব।’
বিডি ক্লিনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘বিডি ক্লিন শুধু নামে না, কথায় না, কাজের মাধ্যমে, ত্যাগের মাধ্যমে, কষ্টের মাধ্যমে তাদের অবস্থান প্রমাণ করেছে। বিডি ক্লিনের সদস্যরা নিজেদের খেয়ে পরের মোষ তাড়িয়ে পরিবেশের জন্য কাজ করছে। এই ছেলেমেয়েরা মাদকাসক্ত না হয়ে, ঘরে বসে স্মার্ট ফোনে সময় নষ্ট করে দেশকে, শহরকে পরিচ্ছন্ন করা জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সত্যিই প্রশংসনীয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে বিডি ক্লিন বর্তমানে একটি ব্র্যান্ড। এটি ইতিমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। এই সুনাম ধরে রাখতে হবে।’
এ সময় বিডি ক্লিনকে দশ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
সবশেষে মেয়র দেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও দেশের আইন মেনে দেশ সেবার জন্য বিডি ক্লিনের সদস্যদের শপথ পাঠ করান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিডি ক্লিনের প্রতিষ্ঠাতা ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘পুরো দেশে বিডি ক্লিনের প্রায় ৪০ হাজার সদস্য কাজ করছে। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পাশাপাশি একটি সুশৃঙ্খল, সুস্থ ও উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন জাতি গঠনই এই সংগঠনটির মূল লক্ষ্য। মানসিক পরিবর্তন নিশ্চিত হলেই দেশ পরিচ্ছন্ন হবে, দেশ উন্নত হবে।’
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অঞ্চল ০৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল বাকী এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নাছির।